প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব, চেয়ারম্যান কক্ষে তালা
শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : কোন প্রতিষ্ঠান ঘেরাও,জোরপূর্বক পদত্যাগ, বে-আইনী তল্লাশীসহ অস্থীতিশীলতা সৃষ্টি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী সকল কার্যকালাপের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্তা গ্রহণ করা হবে মর্মে গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়। অথচ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের একদিন পরেই ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা ঝোলানোর মত ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার ২ নং জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২নং জোড়াদহ ইউনিয়নের ইউপি সদস্যদের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা ঘটে। ৫ই আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে চেয়ারম্যানগনের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় এবং বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামীলীগের বাইরের রাজনৈতিক দলের মেম্বরগন ইউনিয়ন পরিষদের কর্তৃত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় জোড়াদহ ইউনিয়নে বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান (৮ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য) বশির উদ্দীনকে সরিয়ে বিএনপি পন্থী একাধিক ইউপি সদস্যদের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে বেশকিছুদিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করে আসছে।
এরই ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের চেয়ারম্যানের কক্ষে বিএনপি পন্থী ইউপি সদস্য আনিসুর রহমানের নের্তৃত্বে স্থানীয় কয়েকজন তালা লাগিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানায়। সেময় পরিষদের সিসি ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয় বলে জানা যায়। এঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় যেকোন সময় বড় ধরণের সহিংসতার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিষয়ে পরিষদের গ্রাম পুলিশ মোক্তার হোসেন বলেন,‘মেম্বর আনিস আমার কাছে থাকা চেয়ারম্যানের কক্ষের তালার চাবি নিয়ে আগের লাগানো তালা খুলে নতুন একটি তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায়। প্রথমে আমি চাবি দিতে না চাইলেও পরে দিতে বাধ্য হই।’
জোড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব শুভ বলেন, ‘আমি আমার রুমে বসে ছিলাম। আনুমানিক ১টার থেকে দেড়টার দিকে পরিষদের গ্রাম পুলিশ এসে আমাকে জানায় মেম্বর আনিস চেয়ারম্যানের রুমে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। এবিষয়ে মেম্বর আনিস আমার সাথে কোন কথা বলেনি। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে সাথে সাথে অবগত করি।’
জোড়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রনি বিশ্বাস তালা লাগানোর বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, ‘তালা লাগানোর বিষয়ে শুনেছি। তবে কে বা কারা তালা লাগিয়েছে সে বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান বিষয়টি দুঃখজনক। এবিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিসুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি পরিষদের একজন সদস্য। আমরা এমনিতেই সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পরিষদে থাকি। আমি কেন তালা লাগাবো।’
জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবু মিয়া বলেন, ‘আমার কক্ষে তালা লাগানোর বিষয়ে শুনেছি। তাৎক্ষনিক ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছি। তবে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, রুমের মধ্যে থাকা ল্যাপটপ, গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ও নথি কি অবস্থায় আছে তা জানতে পারিনি।’
তিনি আরও জানান, মেম্বরদের মধ্যে প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়া নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সেই বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে সকল মেম্বরদের জানিয়েছি আপনারা আপনাদের দলের নের্তৃবৃন্দের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে যাকে মনোনিত করবেন আমি তাকেই সমর্থন করবো।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, ‘তালা লাগানোর বিষয়টি শুনেছি। পরিষদে তালা লাগানোর একতিয়ার কারও নেই। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
(এসআই/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪)