মোঃ শাজনুস শরীফ, বরগুনা : বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ৪৭৭ কিলোমিটার সড়কে যানচলাচলে অযোগ্য হয়ে পরেছে। এসকল সড়কগুলোর বেশিরভাগ স্থানের পিচ, ইটের খোয়া উঠে যাওয়ায় ছোট বড় গর্তে সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সৃষ্ট গর্তগুলোতে পানি জমে থাকার কারনে যানচলাচলে সমস্যাসহ চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। ভুক্তভোগী বাসিন্দারা দ্রুত মেরামতের দাবী জানালেও বরাদ্দ সংকটের কারণে সড়কগুলো মেরামত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান।

এ সকল সড়কগুলো মেরামত না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয় রোগী এবং স্কুলগামী শিশুদের। এসব সড়কগুলোতে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। পন্য পরিবহন তো দূরের কথা মানুষ চলাচলেরই অনুপযোগী হয়ে পরেছে অধিকাংশ সড়ক।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর বরগুনা জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় এলজিইডি’র (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর) আওতায় ৬ হাজার ৩৪৩ কিলোমিটার কাঁচাপাকা সড়ক রয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার কার্পেটিং, ৫০৮ কিলোমিটার আধাপাকা এবং ৪ হাজার ৪০৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক রয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৪৩০ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়কের মধ্যে উপজেলা সড়ক ৪০১ কিলোমিটার, ইউনিয়ন সড়ক ৪২২ কিলোমিটার, গ্রাম সড়ক ৬০৭ কিলেমিটার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার লাকুরতলা-ফুলঝুড়ি ভায়া বাওয়ালকর ১৬ কিলোমিটার সড়কটি অন্তত ৫ বছর আগে থেকে পরে আছে খানাখন্দ অবস্থায়। যার কিছু অংশ (৩ কিলোমিটার) গত বছর মেরামত করা হলেও এখনো সংস্কার হয়নি বেশিরভাগ সড়ক। এ সড়কটি দিয়ে কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ কশেক হাজার হাজার মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে। খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে বর্তমানে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে।

একই অবস্থা সদর উপজেলার বরগুনা-চালিতাতলী, বরগুনা-নিশানবাড়িয়া, বরগুনা-কালিরতবক, পরীরখাল-রাখাইনপাড়া, ডৌয়াতলা-আয়লা বাজার, বৈকালিন বাজার-আয়লা। আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি-কচুপাত্রা, ঘোপখালী-সোমবাড়িয়া বাজার সড়কগুলোর। জেলার তালতলী উপজেলার ছোটবগী-তালতলী, পঁচাকোড়ালীয়া-চান্দখালী, তালতলী-সোনাকাটা, ছোটবগী-কড়ইবাড়িয়া, বামনা উপজেলার রামনা-খোলপটুয়াসহ একাধিক সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে আছে। এসব সড়কে যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে চালিতাতলীর এলাকার সাকিব চৌকিদার বলেন, মোরা রাস্তায় না, চলাচল করি সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে। রাস্তায় গাড়ি চালালে মনে হয় সমুদ্রের ঢেউয়ে পড়েছে। কত এমপি পরিবর্তন হয়, চেয়ারম্যান পরিবর্তন হয়, মোগো কপাল আর পরিবর্তন হয়না। মাজে মাজে রাস্তা মাইপ্পা গ্যালেও রাস্তায় কাম কাইজ অয় না।

খাজুরতলা এলাকার অটো চালক নাঈম বলেন, লাকুরতলা-ফুলঝুড়ি রাস্তা দিয়া প্রত্যেক দিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। অটো-রিক্সায় যাইতে গিয়া প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকের হাত-পাও ভাইঙ্গা হাসপাতালে যাওয়া লাগছে। অটো-রিক্সা প্রায়ই ভেঙ্গে যায়। গর্ভবতী মা এই সড়ক দিয়া নিয়ে গেলে হাসপাতালে যাওয়া লাগে না, রাস্তায়ই সন্তান প্রসাব করবে। সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি নাঈমসহ স্থানীয় আরে কয়েকজন বাসিন্দা।

তালতলী উপজেলার পচাঁকোড়ালিয়া গ্রামের বেলাল হোসেন মিলন বলেন, আমার বাড়ির সামনের সড়কটি দীর্ঘ্যদিন ধরে খানাখন্দ অবস্থায় পরে আছে। এখান থেকে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা মানুষ হাটতেই কষ্ট হয়। তিনি আরও বলেন, এ সড়কটি মেরামতের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার গেলেও কোন কার্যকরী পদক্ষেপ হয়নি।

এবিষয়ে এলজিইডি বরগুনা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, পাকা সড়কে প্রতি অর্থবছরে অন্তত তিনের একাংশ মেরামত করা প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী এক হাজার ৪৩০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এ অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ৪৭৭ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করতে হবে। তাদের হিসেবে (এলজিইডি) প্রতি কিলোমিটার সড়ক মেরামত করতে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। সে অনুযায়ী ৪৭৭ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করতে ব্যয় হবে ৩শ’ ১০ কোটি ৫ লাখ টাকা। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরগুনা জেলায় সড়ক মেরামতের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে এলসিএস মহিলা কর্মী, এমএমটি ও কেরিড ওভার বাবদ বাদ যাবে ১০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সর্বসাকূল্যে সড়ক মেরামতে ব্যয় করা যাবে মাত্র ২৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। যা প্রয়োজনের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৯ ভাগ। তাই এ অর্থবছরে জেলার ৪৭৭ কিলোমিটার খানাখন্দ সড়কের মাত্র ৩৮ কিলোমিটার মেরামত করা সম্ভব হবে। বাকী ৪শ’ ৩৯ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক অর্থের অভাবে মেরামত করা সম্ভব হবে না। তবে এ হিসাব এলজিইডি কর্তৃপক্ষের। বাস্তবে এর চেয়েও বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক রয়েছে বরগুনা জেলায় এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।

বরগুনা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান বলেন, আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৮০ কোটি টাকার স্কিম তৈরী করে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। যদি সে অনুযায়ী বরাদ্দ পাওয়া যায় তাহলে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যতগুলো সম্ভব সড়ক মেরামত করা হবে। অন্যথায় যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে সেই টাকা দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সড়ক মেরামতের কাজ করা হবে।

(এসএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২৪)