বিশ্বজিৎ সিংহ রায়, মহম্মদপুর : মাগুরার মহম্মদপুরে শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলা উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বড়রিয়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনন্দমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর বাংলা মাসের ২৮ পৌষ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্ববৃহৎ বার্ষিক এই মেলার আয়োজন করে মেলা কমিটি। এলাকার সকল গ্রামে মেলার আমেজ বইতে শুরু করে।

আকর্ষণীয় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখার জন্য বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তার দুপাশে মেলা মাঠের আশপাশ দিয়ে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকার ধনী গরিব ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ শিশু সহ আমোদে মানুষের উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণে ঢল নামে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ মেলা উদযাপিত হয়।

এবারের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন এলাকার ২০টি ঘোড়া অংশ গ্রহণ করে। দুপুরে স্থানীয় কানাবীল থেকে এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় শুরু হয় এবং হবের পোল এলাকায় এসে শেষ হয়।

জানা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলার বড়রিয়া গ্রামের সানু সরদার নামের এক ব্যক্তি মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাগুরা সদরের বাহারবা গ্রামে প্রতিবছর ২৮ পৌষ অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় মেলায় অংশগ্রহণ করতেন বড়রিয়ায় গ্রামের সানু সরদার।

ওই মেলায় বড়রিয়ার সানু সরদার ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। ছিনিয়ে আনতেন প্রথম পুরস্কার। এক বছর মেলা কমিটি জোর করে তার ঘোড়াকে পরাজিত করায়। প্রতিবাদ করায় তিনি লাঞ্চিত হন। ক্ষোভে দুঃখে তিনি পরের বছর থেকে নিজ গ্রামে ওই একই দিনে মেলা শুরু করেন।

আস্তে আস্তে প্রচার প্রচারণা ছাড়াই এই মেলাটি এ অঞ্চলের বৃহৎ মেলায় রূপ নেয়। বিপুল পরিমাণ দোকান-পাট,হাজার রকমের জিনিস-পত্রের সমাহারে মেলা থাকে জাঁকজমকপূর্ণ। মানুষের সমাগমে জন সমুদ্রে পরিণত হয় মেলার মাঠ।

শিশুদের বিনোদনের জন্য, নাগরদোলা, নৌকায় দোল দেয়, চরকা খেলা, শিশু-কিশোরদের কলকাকলি, বাঁশি ঝুনঝুনি শব্দে, মেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকে। সেই সঙ্গে মাছ, মাংস, মিষ্টি মিঠাই, খেলনা, প্রসাধনী, ফার্নিচার, মাটির তৈরী খেলনা, পিঠা, ঘর গৃহস্থালির বিভিন্ন মালামালের পসরা বসে এ মেলায়।

এই মেলাকে কেন্দ্র করে মহম্মদপুর উপজেলা সদর, বিনোদপুর, ধোয়াইল মোড়, নহাটা, রাজাপুর, আউনাড়া সহ বেশিরভাগ হাট-বাজারে মিষ্টি বিক্রিয়ে ধুম পড়ে যায়। মেলা শুরুর আগে থেকে এ সমস্ত এলাকার বাড়ি বাড়ি নিকটতম আত্মীয়, মেয়ে তার জামাই নিয়ে পিতার বাড়িতে বেড়াতে আসে। মেলায় অনেক বড় মাছ পাওয়া যায়। মেলা থেকে বড় মাছ কিনে আপ্যায়ন করানো হয় আত্মীয়-স্বজনদের। প্রতিটি বাড়িতে পিঠাপুলি তৈরির ধুম পড়ে যায়।

বোয়ালমারী থেকে আসা মিষ্টি বিক্রেতা ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডারে মালিক অর্ণব মন্ডল জানান, এবারের মেলায় বেচাকেনা ভালো আছে। সুন্দর পরিবেশে মিষ্টি বিক্রয় করছি।

ফার্নিচার ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গা আশরাফুল আলম, ঝিনাইদহ মহেশপুরের জাকির হোসেন বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা এই মেলায় আসি। প্রতি বছর বেচাকেনার মান থাকে সন্তোষজনক।

মহম্মদপুর উপজেলা ধোয়াইল এর ফার্নিচার ব্যবসায়ী কাবুল মোল্লা বলেন, মেলায় এসে বিক্রয় করে ফেলেছি অনেক ফার্নিচার। মূলত বার্ষিক এই মেলায় ফার্নিচার পাওয়া যাবে প্রায় সপ্তাহব্যাপী। সব শেষে মেলা কমিটির পক্ষ থেকে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এ বিষয়ে মেলা কমিটির সভাপতি খান জাহাঙ্গীর আলম বাচ্চু বলেন, বড়রিয়ার এই ঐতিহ্যবাহী মেলা এবার প্রশাসন দু'দিনের অনুমতি দিয়েছেন। কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২৫)