রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের  ব্যবসায়ী জিএম আমীর হামজার ২৩ লক্ষাধিক টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরো পাঁচ লাখ চার হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে আদালতে আত্মসমর্পণকৃত আসামী ইসতিহাক আহম্মেদ ওরফে আরাফাত হোসেপনা বাড়ির পিছনের হলুদ ক্ষেত থেকে মুটি খুঁড়ে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়। আরাফাত হোসেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নলকুড়া গ্রামের মোতালেব সরদারের ছেলে।

সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নিজামউদ্দিন জানান, গত ২০ জানুয়ারি এজাহারভুক্ত আসামী ইসতিহাক আহম্মেদ ওরফে আরাফাত হোসেন সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্মসমর্পণ করে। পরদিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আহম্মদ কবীর। বৃহষ্পতিবার আমলী প্রথম আদালতের বিচারক নয়ন কুমার বড়াল বৃহষ্পতিবার শুনানী শেষে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুক্রবার তাকে কারাগার থেকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আরাফাত তার কাছে ছিনতাইয়ের টাকা তার বাড়ির পাশে হলুদ খেতে আছে বলে স্বীকার করে। সে অনুযায়ি শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ওই হলুদ খেতের মাটি খুঁড়ে একটি ব্যাগ থেকে পাঁচ লাখ চার হাজার টাকা ও একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরের“ মা ট্রেডার্সের” স্বত্বাধিকারী জিএম আমির হামজার কর্মচারী(ভাড়ায় চালিত মটর সাইকেল চালক) শওকত আলী ও ওবায়দুল্লাহ ব্যবসায়ীক কাজে গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে সাতক্ষীরার দুটি ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত ও তিনজন ব্যবসায়ির কাছ থেকে আদায়কৃত বকেয়াসহ মোট ২৩ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে মোটর সাইকেলে ভোমরায় ফিরছিলেন।

একপর্যাযায়ে বিকাল ৪টা ৫০ মিনিটে আলিপুর ঢালীপাড়া বিদ্যুৎ অফিসের সামনে এলাকায় পৌঁছালে দুটি মটর সাইকেলে পাঁচজন ছিনতাইকারি শওকত হোসেনের মটর সাইকেলের গতিরোধ করে। পরে শওকতের মটর সাইকেলের হ্যান্ডেলে লোহার রড দিয়ে বাড়ি মেরে ও ওবায়দুল্লাহর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। শওকত এবং ওবায়দুল্লাহ রাস্তার উপর পড়ে যায়। এসময় ছিনতাইকারীরা ওবায়দুল্লার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সদর উপজেলার কুচপুকুর গ্রামের আতাউরের ছেলে মেহেদী হাসান মুন্না নামের একজন ছিনতাইকারীকে আটক করে জনতা পুলিশে সোপর্দ করে।

বাকি ৪ ছিনতাইকারী টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আমীর হামজা বাদি হয়ে কলেজ ছাত্র মেহেদী হাসান মুন্না, এজাজুল ইসলাম, আরাফাত হোসেন ও নয়নকে আসামি করে সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। রফিকুজ্জামানকে এজাহারে নাম দিতে বাধা দেন সদর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা। তবে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান মুন্না ২০ ডিসেম্বর বিচারিক হাকিম সুজাতা আমিনের খাস কামরায় ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে নিজে ও রফিকুজ্জামানসহ এজাহারভুক্ত পাঁচজন ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

২০ জানুয়ারি রফিকুজ্জামানকে কাশেমপুর মালীপাড়ার খোকন মালীর তৃতীয় স্ত্রী সাথী খাতুনের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ের তিন লাখ ৯৩ হাজার টাকা। ২০ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে ভোমরার লক্ষীদাঁড়ি গ্রাম থেকে ছিনতাইয়ের মাষ্টারমাইন্ড আলিমউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২১ জানুয়ারি রফিকুজ্জামান ও ২৩ জানুয়ারি আলিমউদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তবে ছেলে রফিকুজ্জামানকে বাঁচাতে রসুলপুরের শাহজাহান সরদারের দ্বিতীয় স্ত্রী ময়না গত ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর ছিনতাইয়ের ইসলামী ব্যাংক এর সিল মারা চারটি এক হাজার টাকার বান্ডিলসহ সাড়ে ১২ লাখ টাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজীব খানের হাতে তুলে দেন বলে জানান।

একইভাবে গত ২৪ ডিসেম্বর নলকুড়া গ্রামের ছেলে এজাজুলের ভাগ পাওয়া ছিনতাইযের এক লাখ টাকা বাবা গ্রাম পুলিশ সাঈদুল হক মিষ্টি মেম্বরকে নিয়ে থানায় যেয়ে মামলার প্রথম তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসানের হাতে তুলে দেন।

(আরকে/এএস/জানুয়ারি ২৫, ২০২৫)