শরীয়তপুরে মানব পাচারকারীদের বিচারের দাবিতে আমরণ অনশন

কাজী নজরুল ইসলাম, শরীয়তপুর : শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের ২৪ যুবককে ইতালি নেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়া দালাল চক্রের অন্যতম সদস্য রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামী রাশেদকে শনিবার দুপুরে শরীয়তপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মরিয়ম আক্তার নিপা রিমান্ড ও জামিন শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করে জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন। শুক্রবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে রাশেদ খানকে আটক করে সিআইডি পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় ভুক্তভোগী ফারুক পেদা বাদী হয়ে রাশেদ খানসহ ৭ জনকে আসামি করে মানব পাচারের একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।। এছাড়া আরো ১১ টি মানব পাচারের মামলার আসামি রাশেদ খান।
এদিকে, রাশেদ খানের গ্রেপ্তারের কথা ছড়িয়ে পড়লে, শনিবার সকাল থেকেই শরীয়তপুর আদালত প্রাঙ্গনে জড়ো হতে শুরু করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
ভূক্তভোগীদের অবস্থান দেখে যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোপনে আসামি রাশেদ খানকে জেলা কারাগারে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর রাশেদ খানের ফাঁসির দাবি ও নিখোঁজ সন্তানদের ফেরত পেতে আদালত প্রাঙ্গনে আমরণ অনশনে বসেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা। এ সময় অনশনে বসা পরিবারগুলোর সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রাশেদ খান ও টুন্নু খানসহ দালাল চক্ররা ২০২২ ও ২৩ সালে শরীয়তপুরের ১৯ যুবক ও মাদারীপুরের ৫ যুবককে ইতালি নেয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে প্রায় এক বছর কেটে গেলেও সন্তানদের খোঁজ না পাওয়ায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর বুরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা করে পাচারকারীরা। গণমাধ্যমে সবাদ প্রকাশ হলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি দেয় রাশেদ-টুন্নু।
নিখোঁজ যুবকেরা হলেন, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের হাতেম শেখের পুত্র জাফর শেখ, আব্দুল মান্নান খানের পুত্র আতিকুর রহমান, ছলিম জমাদ্দারের পুত্র রাশিদুল, বোরহান মৃধার পুত্র সিরাজ, জাহাঙ্গীর মোড়লের পুত্র রফিক মোড়ল, ইকবাল কাজীর পুত্র শামীম কাজী, আব্দুল মান্নান ওঝাঁর পুত্র মিরাজ ওঝাঁ, সালাম আকনের পুত্র দিদার হোসাইন আকন, ইদ্রিস আলী খাঁর পুত্র মো. আমিনুল ইসলাম, সুফিয়ান সরদারের পুত্র মো. ফারুক সরদার, চুন্নু ভূঁইয়ার পুত্র আল আমীন ভূঁইয়া, মো. সালমান সিকদারের পুত্র মো. শাহীন সিকদার, সিরাজ মোল্লার পুত্র সাঈদ মোল্লা, মানিক ফরাজীর পুত্র শহীদুল ফরাজী, হাবিব হাওলাদারের পুত্র সিয়াম হাওলাদার, আব্দুল বেপারীর পুত্র নাহিদ বেপারী, আব্দুল মালেক ফকিরের পুত্র আল আমীন ফকির, হাবিব বেপারীর পুত্র নাঈম হোসেন এবং মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার রিমন মোল্লা, সাকিবুল, মো: পারভেজ, দিপু সিকদার, মো: শাহজাহান হাওলাদার, সাইফুল ইসলাম।
মামলার বাদী ফারুক পেদা বলেন, আমার ছেলে প্রায় এক বছর ধরে নিখোঁজ। আমি ছেলের খোঁজ চাইলে রাশেদ-টুন্নুরা আমাকেসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করেছে। রাশেদ গ্রেপ্তার হলেও একটি প্রভাবশালী মহল তার জামিনের জন্য দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে। আমরা রাশেদের উপযুক্ত বিচার ও অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের দাবিতে অনশন শুরু করেছি৷ আমরা আমাদের সন্তানদের খোঁজ চাই। মানবপাচারকারীদের বিচার ও আমাদের সন্তানদের খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন চলমান রাখব।
শরীয়তপুর পালং কোর্ট পুলিশের জিআরও মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, রাশেদ খান নামে এক এজহার নামীয় আসামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। আদালতে পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড ও আসামীর পক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আদালত রিমান্ড ও জামিনের শুনানির জন্য আগামী সোমবার দিন ধার্য করেছে। আদালতের নির্দেশে রাশেদ খানকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
(কেএনআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৫)