বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনার বেতাগীতে কোচিং বন্ধের নীতিমালা হিমাগারে পরে আছে। কোচিং ঠেকাতে উপজেলা ভিত্তিক কমিটি গঠিত হলেও তার কোন অস্তিত্ব নেই। এ সুযোগে ক্লাসে ফাঁকি দিয়ে উপজেলার অধিকাংশ স্কুল কলেজের শিক্ষকগণ প্রকাশ্যে প্রাইভেট বানিজ্য চালাচ্ছে।

কোচিং বন্ধে সরকার ২০১২ সালে নীতিমালা জারি করেছেন। ওই নীতিমালা অনুযায়ী কোন শিক্ষকই কোচিং পরিচালনা করতে পারবে না। তবে অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ও বিশেষ ক্ষেত্রে আর্থিক দিক বিবেচনা করে দরিদ্র শিক্ষকের বেলা সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে পারবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। তবে ক্লাস চলাকালে ও কোচিং আকারে নয়, শ্রেণীতে বসে রোলকরণ ভিত্তিতে পড়াতে হবে। তাদেরকে সর্বনিম্ন ১২টি ক্লাশকরণ ও ফি বাবদ উপজেলা শহরগুলোতে ১৫০ টাকা করে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সময়ের প্রেক্ষাপটে আজ সবই ম্লান হতে বসেছে।

নীতিমালায় আরো উল্লেখ ছিল কোন এমপিওভুক্ত শিক্ষক কোচিং করালে তার এমপিও বাতিল হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সকল প্রকার প্রদেয় সুযোগ হারাবে। এমনকি কোন শিক্ষকদের নামে ছাত্রদের কোচিংয়ে পড়তে বাধ্যকরণের সত্যতা পাওয়া গেলে ওই শিক্ষককে তার পদটি হারাতে হবে বলেও উল্লেখ ছিল। বাস্তবে পাথর চাপা পরে আছে সেসব নিয়ম-নীতি। এদিকে কোচিং ঠেকাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১জন করে প্রতিনিধি ও ৩ জন শিক্ষানুরাগীর সদস্যদের নিয়ে কমিটি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি ভুক্তভোগীদের। কারণ বেতাগীতে কোচিং বাণিজ্য হ্রাস পাওয়া তো দূরের কথা চলতি সময় এর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কয়েকগুন বেড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, সেই নীতিমালা আজ হিমাগারে পরে আছে। উপজেলার নামিদামি স্কুল ও কলেজগুলোর শিক্ষকগণ বর্তমানে পাল্লা দিয়ে কোচিং ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে জানাগেছে।

তবে বেতাগী ডিগ্রী কলেজ, বেতাগী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেতাগী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত শিক্ষকসহ একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাসাবাড়িতে ব্যাচ পড়ানোর তথ্য পাওয়া গেছে। বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ম্যানেজিংকমিটি ও গভর্নিংবডির সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,তাদের স্কুলের একাধিক শিক্ষক স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থীকে ব্যাচে পড়ায়।

এদিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে বার্ষিক পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। মোটকথা শিক্ষার্থীদেরকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে তাদের কাছে কোচিং পড়তে বাধ্য করেন তারা। শ্রেণীকক্ষে এবং বাসায় মনোযোগ সহকারে পড়ালোখা করলে কোচিংয়ে পড়ার আদৌ প্রয়োজন নেই বলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির উপজেলা শাখার সাধারন সম্পাদক মোঃ মহসীন খান মনে করেন। কোচিং বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির উপজেলা শাখার সভাপতি আবদুস সালাম সিদ্দিকি।

বেতাগীতে কোচিং বন্ধে নীতিমালা সম্পর্কে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান আলী শেখ বলেন,কেন্দ্রীয় ভাবেই এর কার্যক্রম স্থবির তো উপজেলা শহরের বন্ধ করতে একটু সমস্যা রয়েই যায়।

(এমএইচ/অ/ডিসেম্বর ০৬, ২০১৪)