টাঙ্গাইলে চাঁদাবাজি মামলায় নারী সমন্বয়কের ৪ দিনের রিমাণ্ড
ধরলেন, মুচলেকায় ছাড়লেন: আবার ধরলেন, হাজতেও পাঠালেন!

স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল সদর থানা পুলিশের ৭ দিনের রিমাণ্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারী সমন্বয়ক মারিয়াম মোকাদ্দেস মিষ্টির চার দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ সোমবার সকালের দিকে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম মাহবুব খান এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিনি শাহ আলমাসের স্ত্রী।
টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার জশিহাটী গ্রামের মাজাহারুল ইসলামের মেয়ে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নারী সমন্বয়ক।
আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। রবিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের আকুরটাকুর হাউজিং এলাকায় নিজবাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (৮ মার্চ) সকালে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখিপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ির তালা ভেঙে ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন নারী-পুরুষ নিয়ে সেখানে প্রবেশ করেন এবং দখল করেন। এ ঘটনা জেলাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরিফের নেতৃত্বে ১৭ জন ছিন্নমূল মানুষকে উদ্ধার করে দখল হওয়া বাড়িটি খালি করা হয়। এ ঘটনায় মিষ্টিকে আটক করে এসিল্যান্ডের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত ২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করা ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে শনিবার ও রাতেই সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
মুচলেকায় তিনি স্বীকার করেন, “আইনসিদ্ধ অধিকার ছাড়া অন্যের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে প্রবেশ করে অপরাধ করেছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পোস্টের কারণে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।”
৯ মার্চ টাঙ্গাইল-৮ বাসাইল সখিপুর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা করেন। এতে মিষ্টিকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া সহযোগী হিসেবে অজ্ঞাত আরো ৮/৯ জনকে আসামি করা হয়। টাঙ্গাইল সদর থানা মামলা নং ১৫।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত শনিবার (৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়া ছোট কালীবাড়ি সড়কে জোয়াহেরুল ইসলামের পাঁচতলা ভবনের কেঁচিগেটের ছয়টি তালা ভেঙে মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি অজ্ঞাতনামা আরো ৮/৯ জনকে সঙ্গে নিয়ে ভবনে ঢোকেন। তারা ৫ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যান। এ ছাড়া আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আনুমানিক ৫০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করেন। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তারা ১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ছিন্নমূল মানুষকে ভবনের কক্ষে প্রবেশ করিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ওইদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাদী (রওশন আরা খান) বাসায় গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিষ্টি রেগে যান।
তিনি রওশন আরাকে বলেন, ‘এ বাড়িতে বসবাস করতে হলে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় আগামী সাত দিনের মধ্যে বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়া হওয়া হবে।’
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: রুহুল আমিন শরিফ বলেন, শান্তি রক্ষার্থে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রাপ্ত এখতিয়ার বলে মুচলেকা নিতে পারেন। এই এখতিয়ার বলেই মুচলেকা গ্রহণ করা হয়েছে। এখতিয়ার সম্পন্ন কর্তৃপক্ষ সমীচীন মনে করলে অপরাধের তদন্ত করতে বা আইনি ব্যবস্থা নিতে মুচলেকা কোন বাধা সৃষ্টি করে না।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের বাড়ি দখল করে ‘মানসিক ভারসাম্যহীনদের আশ্রম’ বানানোর ঘটনার রবিবার (৯ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার দিকে শহরের আকুরটাকুর হাউজিং এলাকায় নিজবাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানবীর আহম্মেদ বলেন, লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড চেয়ে সোমবার আদালতে পাঠানো হলে বিজ্ঞ আদালত চারদিনের রমিান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
টাঙ্গাইলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, মিষ্টির কর্মকান্ডের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তারা চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখলের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
(এসএম/এসপি/মার্চ ১০, ২০২৫)