স্টাফ রিপোর্টার : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জনসহ চারটি কর্মসূচি পালিত হবে আজ (বুধবার)।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দিনগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

কুয়েট শিক্ষার্থীদের গণঅনশন কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আজকের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বর্জন, সব ক্যাম্পাসে প্রতীকী অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি, এক দফা দাবিতে সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল এবং আজ বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করবেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এক কর্মসূচি থেকে মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে কুয়েট উপাচার্যকে না সরানো হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ‘কুয়েট বাঁচাতে শাহবাগ আবরোধ’-এর ঘোষণা দেয়া হয়।

মঙ্গলবার রাত ১০টার মধ্যে কুয়েটের উপাচার্য পদত্যাগ না করায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষার্থী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে এসে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। রাত ১১টার পর আরও কয়েকশ শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে অবরোধে যোগ দেন। এসময় রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এ সময় তারা শাহবাগ চত্বরের চার রাস্তার মোড় আটকে স্লোগান দেন। স্লোগানে তারা ‘কুয়েট ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘দালাল ভিসির গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘দফা এক দাবি এক, কুয়েট ভিসির পদত্যাগ’, ‘শিক্ষা ও সন্ত্রাস, একসাথে চলে না’, ‘শিক্ষা ও রাম দা, একসাথে চলে না’সহ নানা স্লোগান দেন। এরপর কর্মসূচি ঘোষণা করে রাত ১টায় শাহবাগ সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে ‘লাল কার্ড’ দেখান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।

তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।

কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থার মধ্যে ১৪ এপ্রিল রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া, বন্ধ থাকা শিক্ষা কার্যক্রম ৪ মে ও আবাসিক হলগুলো ২ মে খোলার ঘোষণা দেয়া হয়।

এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন ১৫ এপ্রিল দুপুরে একের পর এক হলের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন তারা। সেই সঙ্গে, উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন।

সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনশন শুরু করেন কুয়েটের ৩২ শিক্ষার্থী। এর আগে, এক দফা দাবি পূরণে ২০ এপ্রিল করা এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন তারা।

এদিকে কুয়েটে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে খুলনায় পৌঁছেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। বুধবার সকাল ১০টায় শিক্ষা উপদেষ্টা ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এই মুহূর্তে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা চলছে।

উপদেষ্টা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। সার্বিক পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে সরাসরি শুনছেন এবং আলোচনা করছেন।

তবে উপাচার্যের অপসারণ ছাড়া কোনোভাবেই অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

(ওএস/এএস/এপ্রিল ২৩, ২০২৫)