রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রাধাবল্লভপুর মদনপাড়ার ভূমিহীন পল্লীতে হামলা, মারপিট, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত দ্রুত বিচার আইনের মামলায় ১৬ আসামির জামিন আবেদন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

আজ বুধবার আসামিরা মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম তা’না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জামিন না’মঞ্জুর হওয়া আসামীরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণতেঁতুলিয়া গ্রামের মোবারক মোড়লের ছেলে সালাম মোড়ল, একই গ্রামের মোকছেদ মোড়লের ছেলে ইউনুছ মোড়ল, নজরুল সরদারের ছেলে শাহীন সরদার, তার ভাই সোহাগ সরদার, শমসের মোড়লের ছেলে হান্নান মোড়ল, মোকছেদ মোড়লের ছেলে শরবৎ মোড়ল, ইউনুস মোড়লের ছেলে হাবিবুল্লাহ মোড়ল, ইদ্রিস মোড়লের ছেলে সবুজ মোড়ল, রাধাবল্লভপুর গ্রামের বাবুরালী গাজীর ছেলে কেনা গাজী, একই গ্রামের মোহর আলী গাজীর ছেলে মোজাম গাজী, নূরুল ইসলাম মোড়লের ছেলে রবিউল মোড়ল, আনার মোড়লের ছেলে রফিকুল মোড়ল, খোদাবক্স মোড়লের ছেলে জিনারুল মোড়ল, তার ভাই সাঈদুল মোড়ল, আনার মোড়লের ছেলে নূর ইসলাম মোড়ল ও মঈনুল মোড়লের ছেলে বাবু মোড়ল।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মরিচ্চাপ নদীর আশাশুনির রাধাবল্লভপুর মদনপাড়ার চরভরাটি জমিতে দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে ৩৫ টি ভূমিহীন পরিবার শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছে। কিছু জমি তারা ডিসিআর পেয়েছেন। আবার ১৫টি পরিবার মৎস্যজীবি সমিতি গঠণ করে চরের ৩০ বিঘা জমি পেতে পানি উন্নয়ন বোর্ডে ডিসিআরের আবেদন করেন।

সম্প্রতি মরিচ্চাপ নদী খননের ফলে তাদের অনেক জমি বেড়িবাঁধে চলে যায়। এরপরও ইউনিয়ন বিএনপি’র একাংশের আহবায়ক ব্রাহ্মণ তেঁতুলিয়া গ্রামের জহিরউদ্দিন মোড়ল, তার চাচাত ভাই কাদাকাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ, রইচউদ্দিন মোড়ল, নজরুল সরদার,বড়খোকনসহ একটি চক্র ভূমিহীনদের ওই জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। বাধ্য হয়ে আজিজুল গাজী বাদি হয়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদসলতে রইচউদ্দিনসহ নয় জনের নামে ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলার নোটিশ পেয়ে আবু সাঈদ ও জহির উদনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী গত ২৭ ফেব্রুয়ারী সকালে মদনপাড়ার ভূমিহীন পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর ও ১০ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুটপাট শেষে পেট্রোল দিয়ে ঘরবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আহত ২০ জন ভূমিহীনদের আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় জাকির হোসেন বাদি হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি জামিন না’মঞ্জুর হওয়া ১৬জনসহ ৩২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮০ জনের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারি অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ সংশোধনী ২০০৯ এর ৪/৫ ধারাসহ পেনাল কোর্ডের ১৫টি ধারায় আশাশুনি থানায় মামলা দায়ের করেন। আসামীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় তেঁতুলিয়া ব্রীজের পাশে মানববন্ধন করেন নির্যাতিত ভূমিহীনরা।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু বলেন, এজাহারনামীয় ৩২ জনের মধ্যে জামিন না’মঞ্জুর হওয়া ১৬ জন গত ২৫ মার্চ মহামান্য হাইকোর্টে গত ২৫ মার্চ অন্তরবর্তীকালিন জামিন আবেদন করেন(ক্রিমিনাল মিস কেস নং- ২৪৪০০/২৫)। বিচারপতি মোঃ মাহাবুল ইল ইসলাম ও বিচারপতি হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদেরকে চার সপ্তাহের জন্য জামিন মঞ্জুর করে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিতে বলেন। তারই অংশ হিসেবে ১৬ জন আসামী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ ছাড়া অপর ১৬ জন আসামী দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে ৬ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল মহামান্য হাইকোর্ট থেকে চার সপ্তাহ করে অন্তবর্তীকালিন জামিন পেয়েছেন। আগামি ৪ মে ও ৬ মে তাদের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হতে হবে। তবে ওই ১৬ জনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. এম শাহ আলম। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুস সাত্তার ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান দিলু।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ২৩, ২০২৫)