অনুমোদন নেই, তবুও সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেইট নির্মাণের দাবি

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে গেইট নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের কোন অনুমোদন নেই। তবুও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের দক্ষিণ পূর্ব পাশে একটি বড় গেইট নির্মাণের জোর দাবী তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে উপজেলা পরিষদ স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমোদন ছাড়া সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে গেইট নির্মাণ করে দিতে নারাজ। এ বিষয় নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে তীব্র আলোচনা সমালোচনা। এই আলোচনা সমালোচনাই এখন কেন্দুয়ার সর্বমহলে ছড়িয়ে পরেছে।
জানা যায়, চলতি বছরের গত ৬ এপ্রিল কেন্দুয়া পৌর শহরের শান্তিবাগ এলাকার ৭২ জন বাসিন্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর পরিষদের দক্ষিণ পূর্ব পাশে করোনা ভাইরাসের সময় বন্ধ করে দেওয়া একটি গেইট খুলে দেওয়া ও সংস্কারের জন্য আবেদন করেন। আবেদনটির অনুলিপি ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কশিনার বরাবরও পাঠানো হয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জনস্বার্থে বন্ধকৃত গেইট খুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি পাঠান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৭ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের সমন্নয় কমিটির সভায় জনস্বার্থে গেইটটি খুলে দেওয়া এবং সংস্কারের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্তের অনুলিপি স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালায়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়। এদিকে ১৯ এপ্রিল পরিষদের অর্থায়নে গেইটটি সংস্কার করে খুলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এই গেইট থেকে মাত্র ১০ গজ দক্ষিণে ময়মনসিংহ বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের পৈতৃক বাসভবন। ১৯ এপ্রিল গেইট সংস্কার করে খুলে দেওয়ার পরও ২০ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আবার পূর্বের গেইট ও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে একটি বড় আকারের গেইট নির্মাণের জন্য আবেদন করেন স্থানীয়রা। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০ এপ্রিল বিকেলেই জরুরী ভিত্তিতে সরজমিন তদন্তে আসেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপ-পরিচালক বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মতামত গ্রহণ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের জোরালো হস্তক্ষেপে খুলে দেওয়া গেইট ও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে আবার বড় আকারের একটি গেইট নির্মাণের পায়তারা চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মতিউর রহমান খান, ফজলুল হক ও আব্দুল গনি বলেন, একটি বড় গেইট নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আরমাই আবেদন করেছি। যাতে এই গেইট দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে।
উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষে গেইট নির্মাণ প্রসঙ্গে কথা বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হুমায়ূন দিলদার। তিনি বলেন, বড় গেইট নির্মাণের কোন প্রয়োজনীয়তা আমরা দেখি না। কেননা গেইটের পরে রাস্তা অত্যান্ত সরু। যা দিয়ে এ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও ফায়ার সার্ভিসের কোন গাড়ি চলবেনা। বরং বড় আকারের গেইট নির্মিত হলে উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা ও অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে গেইট সংস্কার করে জনস্বার্থে খুলে দেওয়া হয়েছে। এখন এই গেইট ও সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে বড় আকারের গেইট নির্মাণ করার কোন যোক্তিকতা নেই।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) তাহমিনা আক্তারের সাথে হোয়াটঅ্যাপ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই গেইট নির্মাণের বিষয়ে ক্ষমতা প্রয়োগের কোন বিষয় নেই। এতে আমার কোন সংশ্লিষ্টতাও নেই। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে আমার বাবার বয়সী। তাদের সুবিধার ও অসুবিধার কথা আমি বলতেই পারি। স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বার্থে একটি বড় গেইট নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে গেইট ও মিনি ইনডোর স্টেডিয়াম নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য ১০টি আবেদন পরেছে। সবগুলি আবেদন যাচাই বাচাই করে দেখা হচ্ছে। তাছাড়া একটি মিনি গেইট সংস্কার করে খুলে দেওয়ার পর আবার আবার বড় আকারের গেইট নির্মাণ করে দেওয়ার দাবীর প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছে। সেখান থেকে অনুমতি পেলেই গেইট নির্মাণ করে দেওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।
(এসবি/এসপি/এপ্রিল ২৪, ২০২৫)