কালিগঞ্জে চাঁদার দাবিতে সাতজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বোমা ছুঁড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির পর পরিবারের এক সদস্যকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা করায় তিন নারীসহ সাতজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার রামনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় কালিগঞ্জ উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের সরদারপাড়ার মৃত গোলাম রহমান সরদারের ছেলে আকবর আলী সরদার (৭০), তার স্ত্রী হাফিজা খাতুন (৬০) ও লাকী বেগম (৫৫), আকবর সরদারের ছেলে মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (৪৫)ও নুরুল আমিন সরদার(৪০), এক নূর ইসলামের স্ত্রী আয়েশা খাতুন (৪০) ও তাদের ছেলে জসীম সরদার (২৫)।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কয়েকজন জানান,গত বছরের ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শংকরপুর গ্রামের সন্ত্রাসী ইয়ার আলী তরফদার, বাহার আলী তরফদার, রেজাউল ইসলাম, রামনগর গ্রামের জমাত আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৪/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা কৃষ্ণনগর, বিষ্ণুপুরসহ উপজেলা জুড়ে শিক্ষক, চাকুরিজীবী, ব্যবসায়িসহ সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদাবাজি শুরু করে। অনেকে চাঁদা দিতে না পেরে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। বর্তমানে ওই চক্রটি এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের ব্যবহৃত বোমা ও পিস্তলের মুখে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না।
তবে দেবহাটার জগন্নাথপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষ ও সাতক্ষীরা সদর থানার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের যোগরাজপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা আবুল কালামের বাড়িতে ডাকাতিসহ প্রত্যেকে কমপক্ষে দুই ডজন মামলার আসামী হিসেবে কারাগারে রয়েছে। এরপরও কৃষ্ণনগরের সাধারণ মানুষ ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য শহর আলী তরফদার, জোহর আলী তরফদার, সিরাজুল ইসলামের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা এতই সাহসী যে প্রকাশ্যে পিস্তল ও বোমা নিয়ে ঘুরলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সাহস পায় না।
কালিগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কালিগঞ্জ উপজেলার রামনগর সরদারপাড়ার আকবর সরদারের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক জানান, রামনগর গ্রামের জমাত আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম ও শংকরপুর গ্রামের জব্বার তরফদারের ছেলে শহর আলী তরফদার তার ভাগ্নে শাকিবের মাধ্যমে বাবা ইকবালের কাছে ৪০ হাজার টাকা ও চাচা বেল্লালের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। ওই টাকা আদায়ের জন্য সিরাজুল, শহর আলী তরফদার, তার ভাই জোহর আলী তরফদারসহ কয়েকজন দিনভর তাদেরকে হুমকি ধামকি অব্যহত রাখে। এমনকি বিকেলে বাড়িতে যেয়ে চাঁদার টাকা না দিলে হত্যার হুমকি দেয়।
আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান. শুক্রবার বিকেলে তাদের গ্রামের জমাত আলী সরদারের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, শহর আলী তরফদার, জোহর আলী তরফদারসহ কয়েকজন বেল্লালের বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র তছনছ করে। রাত ৯টার দিকে সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ইউনুছের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, গোলাম রসুল ও গোলাাম রব্বানী, শংকরপুর গ্রামের জব্বার তরফদারের ছেলে জোহর আলী, শহর আলী, শহর আলীর ছেলে আকাশ, হাসান তরফদারের ছেলে মাসুমসহ ১৪/১৫ জন তার (রাজ্জাক) বাবা আকবর সরদার ঘর থেকে বের হওয়ার পরপরই তার মুখমণ্ডলে লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। বাবা পড়ে যাওয়ার পরপরই তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। চিৎকার শুনে প্রথমে মা হাফিজা খাতুন ছুটে এলে সিরাজুল তার মুখের মধ্যে পিস্তলের নল ঢুকিয়ে দিয়ে খুন করার হুমকি দেয়।
একপর্যায়ে মুখমণ্ডলে লোহার রড দিয়ে বাড়ি মারলে হাফিজা খাতুনের নীচের চোয়ালের তিনটি দাঁত পড়ে যায়। পরে একে একে তিনিসহ নূুরুল আমিন, জসীম সরদার, মা লাকী(২য়) বেগম, আয়েশা খাতুন ছুটে এলে তাদেরকে পিটিয়ে ও দা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছুঁটে এলে শহর আলী তরফদার দুটি হাতবোমা ছুঁড়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে।
ভগ্নিপতি ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজন বালিয়াডাঙা বাজারের বন্ধন ক্লিনিকের এ্যম্বুলেন্স এর মাধ্যমে রাত ১১টা ২০ মিনিটে তাদেরকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, আকবর সরদারের শ্যালক মশিউর রহমান শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তাকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করে।
এ ব্যাপারে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদা দাবি ও মারপিটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তার সঙ্গে আকবর সরদার ও তার জামাতা ইকবাল হোসেনের জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে দীর্ঘদিনের। ২০ এপ্রিল তারা জমি বুঝে নিয়ে ঘেরা দিয়ে দখলে নেওয়ায় এ ধরণের ঘটনা সাজানো হয়েছে।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আকবর সরদার, হাফিজা খাতুন ও আব্দুর রাজ্জাকের জখম গুরুতর।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে। তবে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
(আরকে/এএস/এপ্রিল ২৬, ২০২৫)