‘প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকজন আমার জমির সব পাকা ধান কাইট্যা লইয়্যা গেছে গ্যা’

কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি : লাঠিসোটা লইয়্যা আইয়্যা প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী লোকজন আমার জমির সব পাকা ধান কাইট্যা লইয়্যা গেছেগ্যা। আমার স্বামী নাই, সন্তানও নাই। আমি এক অসহায় বিধবা নারী। আমাকে দুর্বল পাইয়্যা আমার লাগানো জমির পাকা সব ধান কাইট্যা লইয়্যা যাওয়াতে আমার সর্বনাশ অইয়া গেছে। এহন সারা বছর আমি কি খাইয়্যাম, কিভাবে চলবাম এই চিন্তায় আমার মরার মতো অবস্থা অইছে। পুলিশের নিষেধ থাকার পরও আমার জমির পাকা ধান কাইট্যা লইয়্যা যাওয়াতে আমি হতবাগ অইয়্যা গেছি। আমি এহন কই যাইয়্যাম, কার কাছে যাইয়্যাম? আমি সরকারের কাছে আমার জমির ধান আমাকে ফিরাইয়্যা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতাছি।
কান্না জড়িত কণ্ঠে এই কথা গুলো বলছিলেন, কেন্দুয়া উপজেলার ১৪ নং মোজাফরপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মৃত আব্দুর সাত্তারের স্ত্রী হাজেরা খাতুন। বয়স অনুমান ৪০ বছর। তার বাবার বাড়ি একই ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত মজলিশ মিয়ার কন্যা।
হাজেরা খাতুন জানান, সরকার ১ নং খতিয়ানের সরকারি জমি গত কয়েক বছর আগে বন্দবস্ত মামলা নং ৭৯৬ মূলে কয়েকটি দাগের হারুলিয়া চারিতলা মৌজার ১ একর ৩৭ শতাংশ জমি বন্দবস্ত দেয়। তার নামে জমা খারজিও আছে। কিন্তু প্রতিপক্ষের চারিতলা গ্রামের তাহের উদ্দিন, মোবারক, মাসুদ মিয়া, মজলিশ, রবিউল্লাহ, অলিউল্লাহ গণ জোরামলে তার জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে যাবেন এ আশংকায় গত ২১ এপ্রিল কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর একটি অভিযোগ করেন। ওইদিনই কেন্দুয়া থানা পেমুই তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক এস.আই বাবুল ঘটনাস্থলে গিয়ে ধান কেটে নিয়ে যেতে বাধানিষেধ করেন।
হাজেরা খাতুন জানান, থানা থেকে নিষেধ দেওয়ার পরও প্রতিপক্ষের লোকেরা বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে দিনের বেলায় পাকা ধান কেটে নিয়ে যায়। এরপর আলোচনার মাধ্যমে মিমাংসা না হওয়ার আগ পর্যন্ত পাকা ধান মাড়াই করতে পুলিশ নিষেধ করেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারিতলা গ্রামের মজলিশ মিয়ার ছেলে রবিউল্লাহ ও অলিউল্লাহ লোকজন নিয়ে ধান কেটে নিয়ে যান। জানতে চাইলে তারা বলেন, জমিতে আমরাই ধানের চারা রোপন করেছি আমরাই কেটেছি। পুলিশ ধান কাটতে আপনাদের নিষেধ করেছিল তবে কেন পুলিশের বাধা নিষেধ অমান্য করে ধান কেটে নিয়ে গেলেন? এর উত্তরে রবিউল্লাহ বলেন, এই জমি আমাদের। আমাদের কাছে সব কাগজপত্র আছে। আমরা জমি রোপন করেছি, আমরা কাটবোনা কেন? আমরাই আমাদের জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে এসেছি। তবে যেহেতু পুলিশের নিষেধ আছে সেজন্য আমরা কাটা ধান স্তুপাকারে রেখে দিয়েছি। আলোচনা করে সমাধানের আগ পর্যন্ত ধান মাড়াই করবো না।
২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার হাজেরা খাতুন জানান, কেটে নেওয়া যে ধান স্তুপাকারে রাখা হয়েছিল সে ধানও মাড়াই করে ফেলেছে। ২৫ তারিখ শুক্রবার পেমুই তদন্ত কেন্দ্রে দুই পক্ষকে নিয়ে বসার কথা ছিল। কিন্তু রবিউল্লাহ ও তার লোকজন অসুস্থতার কথা বলে পুলিশের কাছ থেকে সময় নিয়েছে। তবে হাজেরা খাতুন জানান, স্তুপাকারের ধান রবিউল্লাহরা মাড়াই করে ফেলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেমুই তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, আমরা জমির পাকা ধান কাটতে তাদেরকে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু নিষেধ অমান্য করে কেন তারা ধান কেটে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারছিনা।
তবে নিষেধ করার পরও ধান কেটে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মহোদয় কে জানিয়েছি। তিনি এ বিষয়ে উভয়পক্ষকে থানায় নোটিশ করে বিষয়টির সুরাহা করবেন।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে তিনি জানান, ওই জমিটি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা বিদ্যমান। উভয় পক্ষই জমিটি তাদের বলে দাবি করছেন। আমরা খুব অচিরেই উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখে সামাজিক ভাবে একটি সুন্দর মিমাংসার দেওয়ার উদ্যোগ নেব। আশা করি সুন্দর একটি সমাধান হবে।
(এসবিএস/এএস/এপ্রিল ২৯, ২০২৫)