শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে শঙ্কিত নড়াইলের কৃষক

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : সনাতন বিশ্বাস এবার ৩ একর জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তার জমির ধান পেঁকে গেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান কাঁটা নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। তার কারণ, কৃষি শ্রমিক সংকট। এ জন্য তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে ধান কাঁটতে চলে গেছেন। সনাতনের বাড়ি উপজেলার বনগ্রামে। তিনি বলেন, ' সারা বছর একটা ফসলের ওপর ভরসা করতে হয়। বসে থাকলে তো ধান ঘরে উঠবে না। শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেরাই কাজ শুরু করেছি। শ্রমের যে মুজুরী, সেই হিসেবে ধানে লাভের অংশ কম।
আজ বুধবার দুপুরে নড়াইল সদর উপজেলাসহ, কালিয়া ও লোহাগড়ার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, এখনো এ অঞ্চলের পাকা ধান পুরোপুরি কাঁটা হয় নাই। জমির ধান পেঁকে গেছে, নিচু জমিগুলোতে পানি জমেছে। আকাশে মাঝে মাঝে ঘন কালো মেঘ হলেও মাঝারি বা ভারী বর্ষণ হয় নাই। এ অবস্থায় যতদ্রুত সম্ভব ধান ঘরে তুলতে হবে কৃষকদের। কিন্তু শ্রমিক সংকট থাকায় জমির পাঁকা ধান ঘরে তোলা যাচ্ছে না। মজুরি বাড়িয়েও মিলছে না শ্রমিক। ফলে জেলার কৃষকরা সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে কি না, সেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সদর উপজেলার কোড়গ্রামের চাষি পোপাল গোলদার বলেন, ‘৩ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। ধান পেঁকে গেছে, কিন্তু কাটার লোক নেই। তিন বার খেতে দিয়ে ৮০০ টাকা মজুরি দিয়ে ভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক আনতে হচ্ছে।’
নড়াইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে যানা গেছে, এবছর নড়াইল জেলায় ৫০ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানচাষ করা হয়েছে।
জেলার কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচ বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। সার, সেচ, বীজ, কীটনাশক—সবকিছুর দাম বেড়েছে। বিশেষ করে সেচনির্ভর জমিতে ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণে খরচ আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট আর বাড়তি মজুরি।
সদর উপজেলার বাহিরগ্রামের কৃষক মো. জমিরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, 'আমি তিন বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছি। আল্লাহর রহমতে ধান ভাল হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকেরা ৮ শ টাকা করে মুজুরী চায়। তারা একুট বেশি চায়। ধান রোপন,সার শ্রমিক দিয়ে তেমন লাভ হয় না। কৃষি অফিস থেকে যে হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের মাঠে কখনো আসেনি।’
নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, 'উপজেলায় হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। অনেক কৃষকদের বিছালীর চাহিদা থাকায় এ মেশিন দিয়ে কেউ ধান কাটতে চায় না। হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটালে শ্রমিক সংকট অনেকটা কম হত। জেলার অনেকে ভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত, ফলে প্রতি মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের মুজুরি বেড়ে যায়।’
(আরএম/এসপি/এপ্রিল ৩০, ২০২৫)