‘মানবিক করিডোর’

শিতাংশু গুহ
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগতভাবে মায়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মীকে ‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মায়ানমার লিখিতভাবে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এ করিডোর দেয়া ঠিক কি বেঠিক এনিয়ে দেশে এখন কথাবার্তা হচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে হলে ড: ইউনুস-কে করিডোর দেয়া ছাড়া উপায় ছিলোনা। বিএনপি’র মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘সরকারের কথা বলে নেয়া উচিত ছিলো’। তিনি বলেন, ‘আমরা আর একটা গাজায় পরিণত হতে চাইনা’। জামাত বলেছে, বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া দরকার। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘রাখাইন করিডোর নিয়ে বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার কিছু নেই। স্বৈরাচার হাসিনাকে তাঁড়িয়ে জনগণ আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমার যা ভাল মনে হয়েছে, তাই করেছি’। মানুষ কিন্তু বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না, এবং বলছে যে, মিয়ানমার সীমান্তে মানবিক করিডোরের নামে দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, আড়ালে চলছে যুদ্ধের প্রস্তুতি।
রাখাইনে দুর্ভিক্ষ অবস্থা বিরাজ করছে, সেখানে চটজলদি মানবিক সাহায্য পাঠানো দরকার, তাই এ করিডোর। ভারতের মধ্য দিয়েও সেটা সম্ভব ছিলো, ভারত ড: ইউনূসের মত অতটা মানবিক নয়, অথবা মোদী ভারতকে বিপদে ফেলে ক্ষমতায় থাকতে চাইবেন না, অথবা মোদী জনগণের ভোটে নির্বাচিত, ক্ষমতায় থাকতে তার বাইরের সাহায্য দরকার নেই? মানবিক করিডোর অনেকটা ‘মানবিক বিয়ে’র’ মত, বউ আপনার, অধিকার সবার, অনেকটা যেমন ‘গরিবের বৌ সবার ভাবী’? ভারতকে করিডোর দেয়ার সময় দেশ বিক্রীর কথাবার্তা শোনা গেছে, এখন তা শোনা যাচ্ছেনা। জনগণ জানতো ভারতই শুধু করিডোর নেয়, অথচ ভারত ট্র্যান্স-শীপমেন্ট বাতিল করলে সবাই জানলো যে, বাংলাদেশও করিডোর সুবিধা ভোগ করতো। পার্শ্ববর্তী দু’টি দেশ করিডোর ব্যবহার করবে এতে আপত্তির কিছু নেই, সমস্যা শুধু ভারতকে নিয়ে, ভারত হলে চলবে না?
ইসলামী মৌলবাদী শক্তি যেকোন ঘটনায় সর্বদা একটি ‘ন্যারেটিভ’ তৈরী করে। যেমন ৯/১১-তে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধ্বংসের পর তারা একটি থিওরি দেয় যে, ওটা ইহুদীদের কাজ? আবার পহেলগামে ‘হিন্দু-হত্যার’ পর এঁরা বলতে শুরু করে যে, ওটা মোদীর নির্বাচনী প্ল্যান। মানুষ এগুলো বিশ্বাস না করলেও কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্যে বোকা বানানো যায় বটে। করিডোর নিয়েও তেমনি একটি ন্যারেটিভ ইতিমধ্যে তৈরী হয়ে গেছে, যদিও সবাই বুঝে ওটি দেয়া হয়ে গেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানালেন যে, রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশ মেনে নিয়েছে। নানান রকম কথাবার্তা আসার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি বললেন, ‘তথাকথিত ‘মানবিক করিডোর’ নিয়ে জাতিসংঘ বা কারো সাথে কোন আলোচনা হয়নি’। ঠ্যালা সামলান, এসব বিতর্কিত ন্যারেটিভ তৈরী করার অর্থ হচ্ছে, ‘জনগণকে কিছু সময়ের জন্যে হলেও বিভ্রান্তির মধ্যে রাখা’।
যুদ্ধ ভারতও চায়না, পাকিস্তানও চায়না, ড: ইউনুস চায়। এই আন্তর্জাতিক প্লেয়ার ‘মেটিক্যুলাসলি’ বাংলাদেশে একটি ঝামেলা পাকাতে চাচ্ছেন, লক্ষ্য ক্ষমতায় টিকে থাকা। পাক-ভারত যুদ্ধ হলে পাকিস্তান পারমানবিক বোমা হামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বাংলাদেশের কাছে এমন বোমা থাকলে ড: ইউনুসও তেমন হুমকি দিতেন। বাংলাদেশী তৌহিদী জনতা চায় পাকিস্তান ভারতের ওপর আণবিক বোমা ফেলুক। আণবিক বোমার বিষয়টি অতীব জটিল, এবং তা ইচ্ছেমত যত্রতত্র ফেলা যায়না। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, যুদ্ধ লাগলো, পাকিস্তান একটি আণবিক বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নিলো, তা সেটি ভারতের কোথায় ফেলবে? বিশেষজ্ঞ বললেন, সীমান্ত থেকে যতটা দূরে সম্ভব পাকিস্তান সেখানে বোমাটি বর্ষণ করা হবে। কেন? কারণ বোমার ক্ষতিকর রশ্মি যেন পাকিস্তানে না আসে? পাকিস্তান থেকে কলকাতার দুরুত্ব সর্বাধিক, সুতরং বোমা কলকাতায় পড়ার সম্ভবনা বেশি। সামান্য এদিক-ওদিক হলে সেটি ঢাকায়ও পড়তে পারে? ঢাকা বা কলকাতা যেখানেই পড়ুক, তৌহিদী জনতা, কম্যুনিষ্ট, বাঙ্গালী হিন্দু-মুসলমান সবাই মরবে? এ গল্পের মোরাল হচ্ছে, নিজে বাঁচুন, অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করুন।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।