শিতাংশু গুহ


রবিবার ৪ঠা মে ২০২৫ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র জমিন শুনানী। তিনি কি জামিন পাবেন? সরকার চাইলে পাবেন, না চাইলে পাবেন না। হয়তো পাবেন না, পেলে একবার জামিন হবার পর সরকার তড়িঘড়ি করে তার মুক্তি ঠেকাতে কোর্ট বসিয়ে জামিন স্থগিত করতেন না? এখনকার শুনানি হয়তো একটি লোক দেখানো পদক্ষেপ। উকিলরা বলছেন, হয়তো মামলাটি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেবে,  চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র জামিন আবার অনির্দিষ্টকালের জন্যে আটকে যাবে। জানা যায়, ক’জনা লোক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র মায়ের সাথে দেখা করেছেন, তারা বলেছেন,  চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু যদি আন্দোলন-টান্দোলন না করে বা ঝামেলা না বাঁধায়, যদি এমন নিশ্চয়তা দেয়, তবে জামিন তেমন সমস্যা হবার কথা নয়? ভদ্রমহিলার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, সবকিছু ঠিকমত বলতে পারেন না, যেটুকু বলেছেন এর মর্মার্থ এটুকু। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু কি আপোষ করবেন? আমার ধারণা, যতটুকু তাঁকে জেনেছি, তিনি আপোষ করবেন না? সুতরাং, তিনি জামিন পাচ্ছেন না? 

সরকার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে ভয় পাচ্ছেন। এ সময়ে ইউনুস সরকারের পেছনে জনসমর্থন নেই, তিনি শুধু মৌলবাদী-জঙ্গীদের সমর্থনে টিকে আছেন। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু পুনরায় হিন্দুদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুললে সরকার পড়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকবে। হাস্যকর মনে হচ্ছে? আসলে সরকার ভয় পাচ্ছে, হিন্দুদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সমর্থন দেবে, পেছন থেকে আন্দোলনকে তুঙ্গে নিয়ে যাবে, এবং তাঁরা রাস্তায় নামার সুযোগ ও সাহস পাবে। আর এবার হিন্দুরা আন্দোলন শুরু করলে বিএনপিও আন্দোলনে নামার উৎসাহ পাবে, কারণ বিএনপি বুঝে গেছে, এ সরকারের কাছে তাঁরা ‘একই সাপের দুই বিষ’-র একটি! ড: ইউনুস এমনিতে ক্ষমতা ছাড়বেন না, আন্দোলন লাগবে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুকে কি তাঁরা আন্দোলন করার জন্যে ছাড়বে? চেম্বার জজ আদালতে কি সরকার এমনিতে গেছে? আপনি এটিকে ‘কাজীর বিচার’ বলতে পারেন। কাজী বিচার করতেন ‘আল্লাহ’র নামে’, রায় দিতেন সম্রাটকে খুশি করার জন্যে। বাংলাদেশে বিচারকদের ঘাড়ে কয়টি মাথা যে, তাঁরা উচ্চবাচ্য করে?

বিচারকরা কি মব-জাষ্টিসের কথা ভুলে গেছেন? মব-জাষ্টিস কি বিচারপতিদের বাধ্য করেনি পদত্যাগ করতে? আসলে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা’র অবমাননাকর বিদায়ের সাথে সাথে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে কব্জায় রেখেছেন, ড: ইউনুস পুরোপুরি বন্দী করে ফেলেছেন। সুতরাং বিচার চেয়ে লাভ নেই? এদিকে ‘কালুয়া টোকাই’ হাসনাত আব্দুল্লাহ সামাজিক মাধ্যমে পোষ্টে লিখেছেন: ‘চিন্ময়ের জামিনকে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে করিনা। চিন্ময়ের ঘটনার শুরু থেকেই ভারতীয় আধিপত্যবাদ এ দেশের উপর অন্যায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছে। চিন্ময়ের জামিনও কি সেই চাপের কাছে নতি স্বীকার করেই দেওয়া হল? ইন্টেরিম সাবধান! আলিফের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের রাস্তা উন্মুক্ত করলে পরিণতি ভালো হবেনা’। ‘ধলা টোকাই’ সার্জিস বা ‘কালুয়া টোকাই’র- হুমকী অমান্য করার সাধ্য কি ড: ইউনূসের আছে? মনে পড়ে কি ‘কালুয়া টোকাই’ সেনা-প্রধানের বিরুদ্ধে কি বলেছিলো? তারাই যখন সহ্য করেছে, ড: ইউনুস তো সিভিলিয়ান পাবলিক!

জামিন পাওয়া একজন নাগরিকের অধিকার। চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র বিরুদ্ধে মামলাটি ভুয়া এবং প্রতিশোধমূলক। তিনি একজন শান্তিপ্রিয় নাগরিক। তার আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ মানুষ হলেও একটি ঢিল পড়েনি, বাস পুড়েনি, পুলিশ মরেনি, কেউ আহত-নিহত হয়নি, আন্দোলন ছিলো শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল। এ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র জামিন না পাওয়ার কোন কারণ নেই। সবাই সেটা জানে, বোঝে, কিন্তু মানেনা। হয়তো ইউনুস সরকারের পতনের আগে তিনি জামিন পাবেন না! ড: ইউনুস সরকারের অবস্থা দিনদিন খারাপ হবে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র জামিন ঝুলে যাবে? ভাগ্য ভালো, ড: ইউনুস সরকারের বিদায় ঘন্টা বেজে গেছে। কেজানে হয়তো তার অবস্থাও চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র মতো হতে পারে। আমি চাই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র জামিন হোক। এত কথার পরও সরকারের কাছে আবেদন, ড: ইউনুস সরকার রবিবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভু’র মুক্তি দিন।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।