স্টাফ রিপোর্টার : মার্কিন স্বার্থে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন একটি গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা।

শনিবার (৩ মে) সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির (সিপিএএ) উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ গোলটেবিল বৈঠক হয়।

সিপিএএ এর প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ড. মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যপক দিলারা চৌধুরী, পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (সার্ক ও বিমসটেক) রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার, নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ হাসান নাসির, এনডিসি, পিএসসি, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গর্ভন্যান্সের (এসআইপিজি) পরিচালক অধ্যাপক তৌফিক এম হক, দৈনিক নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলি, সাওয়াব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জামান, তরুণ সমাজ চিন্তক আলী আহসান জুনায়েদ এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী, বিশিষ্ট ক্লাইমেটচেঞ্জ বিশেষজ্ঞ ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমদ।

বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ভূ-রাজনীতিবিদ প্রফেসর দিলারা চৌধুরী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, গত তিনটা নির্বাচন ডিপ স্টেট, আমলাতন্ত্র এবং রাজনীতিবিদরা নষ্ট করেছে। তাই অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি লুক ইস্ট পলিসি নতুন করে ভাবতে হবে। বর্তমান সরকার পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে এটা গুরুত্বপূর্ণ।

অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, যে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরকে মিয়ানমারের সঙ্গে মানবিক করিডোর নিয়ে আলোচনা করতে হবে। মানবিক করিডোর নিয়ে সিভিল সোসাইটিতে বেশ বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন সম্মিলিতভাবে ১৯৯০ এর শেষ দিকে বার্মা অ্যাক্ট নতুন করে প্রণয়ন করেছে। মার্কিন প্রশাসন বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়নের জন্য এশিয়া-প্যাসিফিকে বেশ বরাদ্দ রেখেছে। মার্কিন প্রশাসন চায় বাংলাদেশ বার্মা অ্যাক্টের গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টর হয়ে উঠুক। বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে বার্মা অ্যাক্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই এ বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

দৈনিক নয়াদিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলি বলেন, চীন ও মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে সমঝোতা না হলে বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। মিয়ানমারকে ন্যূনতম গণতান্ত্রায়নের পথে না নিলে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তৌফিক এম হক বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কোনো সংস্কার কমিশন না হলেও বিগত কয়েক মাসে এ ক্ষেত্রে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। বর্তমানে আমরা একধরনের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির আভাস পাচ্ছি। বিগত দিনে আমরা খুব ভারত নির্ভরশীল ছিলাম।

রোহিঙ্গা সমস্যার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পরিবর্তে বরং নতুন করে আসছে। জনগণের মতামতের বাইরে গিয়ে গোপনে কোনো কিছু করা যাবে না। মার্কিনীরা কোনো মুসলিম দেশের সমস্যার সমাধান করেনি। তাই রোহিঙ্গাসহ বার্মা অ্যাক্টের বিষয়ে চীন ও জাতিসংঘকে কাজে লাগাতে হবে। মার্কিন স্বার্থে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা যাবে না।

ডিফেন্স নেক্সাস জাস্টিসের প্রেসিডেন্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির, এনডিসি, পিএসসি (অব.) বলেন, করিডোর বিষয়ে আমরা যদি ভালোভাবে সিদ্ধান্ত না নেই তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়বো। যারা করিডোর নিয়ে কাজ করছে তারা অনেকে বাংলাদেশের নাগরিকও নয়। তাই জাতিসংঘ ও চীনের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, আমাদের জাতীয় স্বার্থ সবসময় চিরন্তন। ফলে এ আলোকে আমাদের বন্ধু ও নীতি নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী বলেন, বাংলাদেশকে বুঝতে হলে বাংলাদেশ-ভারতের মানচিত্র একসঙ্গে বুঝতে হবে। নেপাল-ভুটানকে সংযুক্ত করার ভিশন থাকতে হবে। চীনের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। আমাদেরকে সাগরের মাধ্যমে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। মিয়ানমারকে করিডোর দিতে হলে রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে তা করতে হবে।

সাওয়াব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম রাশেদুজ্জমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা হতাশার সঙ্গে দেখছি যে এ বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ক্রমেই ম্রিয়মান হচ্ছে। বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে আমরা নতুন বাংলাদেশ করতে পারবো না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা বোরহান উদ্দিন বলেন, তরুণদের কর্মসংস্থান আমাদের পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হওয়া প্রয়োজন। লুক ইস্ট এশিয়া মডেলকে আবার নতুন করে এগিয়ে নিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড অ্যাডভোকেসির (সিপিএএ) প্রেসিডেন্ট ড. মো. শরীফুল আলম বলেন, সিপিএএ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে। ফলে আমরা সবার মতামত ও প্রেক্ষিতকে আমরা গুরুত্ব দিয়ে থাকি। তবে আমরা জাতীয় স্বার্থকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি।

(ওএস/এএস/মে ০৪, ২০২৫)