গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : অনুষ্ঠান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট  ও রূচিশীল ব্যক্তির ডাইনিংএ  বাসমতি চালের ভাত, পোলাও বা বিরিয়ানী বেশ সমাদৃত। প্রিমিয়ার কোয়ালিটির বাসমতি চাল সাধারণত ভারত-পাকিস্তান থেকে আমদানী করতে হয়।

সুপার সপে প্রতি কেজি চাল ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ চাল আমাদানীতে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা ব্যয় হয়। আমদানী নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) বাসমতি জাতের ধান ব্রি ধান১০৪ উদ্ভাবন করেছে। এ ধানের চাল বাসমতির আমদানী নির্ভরতা কমাবে। এতে বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেলে বিদেশে চাল রপ্তানী করে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। সম্ভাবনাময় ব্রিধান-১০৪ দেশের কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত করবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার কৃষকরা ১০ হেক্টর জমিতে ব্রিধান-১০৪ জাতের আবাদ করেন। উৎপাদিত ধান কৃষি বিজ্ঞানী, স¤প্রসারণ কর্মকর্তা ও কৃষককদের সামনে কেটে মাড়াই ও ওজন করে দেখো গেছে হেক্টর প্রতি এ ধান ৭.২৫ মেট্রিক টন ফলন দিয়েছে। উপযুক্ত পরিবেশে সঠিক ব্যবস্থাপনা করলে এ জাতটি হেক্টরে ৮.৭১ টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম । ব্রি ধান ১০৪ চাষাবাদে রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়েছে।

ব্রি গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার রোমেল বিশ্বাস বলেন, ব্রি ধান ১০৪-এ আধুনিক উফশী ধানের সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পরবর্তী বছর চাষাবাদের জন্য বীজ সংরক্ষণ করা যায়। জাতটির গড় জীবনকাল ১৪৭ দিন। ১ হাজার টি পুষ্ট ধানের ওজন গড়ে ২১.৫ গ্রাম। এ জাতটি বাসমতি টাইপের ব্রি’র একমাত্র সুগন্ধি ধানের জাত। এ ধানের দানায় অ্যামাইলোজের পরিমাণ শতকরা ২৯.২ ভাগ। এছাড়া প্রোটিনের পরিমাণ শতকরা ৮.৯ ভাগ এবং ভাত ঝরঝরে। এ ধানের গুণগত মান ভালো অর্থাৎ চালের আকার আকৃতি অতিরিক্ত লম্বা চিকন (৭.৫ মি.মি. লম্বা) এবং রং সাদা।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সঞ্জয় কুমার কুন্ডু বলেন, ব্রি ধান ১০৪ এর বাসমতি চাল আমাদের কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তর করবে। এ ধানের চাল বিদেশে রফতানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। এ ধান কৃষকের আয় কয়েকগুন বৃদ্ধি করে দেবে। তাই আমরা এ ধানের আবাদ স¤প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী গ্রামের কৃষক আকবর আলী শেখ বলেন, একশ’ শতাংশ জমিতে এ ধানের আবাদ করেছি। হেক্টর প্রতি এ ধান প্রায় ৭.৭ টন ফলন দিয়েছে। এ ধান বেশি দামে বিক্রি করতে পারব। আমি লাভের টাকা ঘরে নেব । আমার ক্ষেতের ধানের ফলন দেখে আশপাশের কৃষক এ ধানের আবাদে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমি আগামী বছর ৩শ’ শতাংশ জমিতে এ ধানের আবাদ করব।

(টিবি/এএস/মে ০৪, ২০২৫)