নড়াইলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন

রূপক মুখার্জি, নড়াইল : এ বছর নড়াইল জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালী ধানের বাম্পার ফলনে খুশি জেলার কৃষকরা। কিন্তু গেল এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে থেকে হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টি কৃষকদের জন্য নতুন দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে। ঝড়-বৃষ্টিতে মাঠে কেটে রাখা ধান ভিজে গেছে এবং প্রবল বাতাসে ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়ায় ধানের গুণগত মান ও বাজার দর নিয়ে চিন্তিত স্থানীয় কৃষককূল।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে , এ বছর নড়াইল জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ৫০,২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নড়াইল সদর উপজেলায় ২৩,২৫৫ হেক্টর, কালিয়ায় ১৬,৫২০ হেক্টর এবং লোহাগড়ায় ১০,২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ আরও জানিয়েছে, এই আবাদ থেকে প্রায় ২,২০,৭৩০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের বাঁকা গ্রামের গোলজার মোল্যার ছেলে বর্গাচাষী চুন্নু মোল্যা (৪৩) বলেন, 'এ বছর তিনি ২ পাখি ১২ কানি জমিতে রড মিনিকেট জাতের ধানের আবাদ করেছেন। ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।ইতোমধ্যে এক পাখি জমির ধান কেটে বাড়ি আনা হলেও বাকী এক পাখি জমির ধান মাঠে কাটা অবস্থায় রয়েছে। হঠাৎ শনিবার এবং রবিবারের বৃষ্টিতে সেই কাটা ধান ভিজে গেছে। এতে করে ধানের গুনগত মান কিছুটা খারাপ হবে বলে ওই কৃষক আলাপকালে জানিয়েছেন।
পার-মল্লিকপুর গ্রামের অপর ক্ষুদ্র বর্গা চাষী আনোয়ার হোসেন বলেন, 'এবার ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে কেটে রাখা ধান ভিজে গেছে। এখন সেই ধান শুকাতে পারছি না, ফলে চালের মান খারাপ হচ্ছে'।
কালিয়া উপজেলার কৃষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'ধান কাটার সময় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। যারা আছে, তারা বেশি মজুরি চাচ্ছে। আবার বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে পারছি না। ধান নিয়ে পড়েছি মহাবিপদে'।
নড়াইল সদর উপজেলার নোন্দখোল এলাকায় ৩ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন পলাশ খান। তিনি জানান, 'ধান ভালো হলেও ধানের দাম কম'। ধানের এই দামে কৃষক বাঁচবে না। বর্তমানে নড়াইল জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নতুন ধান ১১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ধান নিয়ে কৃষকদের এহেন পরিস্থিতির পাশাপাশি স্থানীয় কৃষি বিভাগও এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলে মনে করছে।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, 'আমরা কৃষকদের দ্রুত ধান কাটার এবং ভেজা ধান শুকানোর পরামর্শ দিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও হচ্ছে'।
(আরএম/এএস/মে ০৫, ২০২৫)