প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই
ছাত্রীকে কুপ্রস্তাবের প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ
.jpg)
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়ায় শিক্ষকের পদত্যাগ ও বিচার দাবীতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের সময় বিদ্যালয়ে আসার পথে প্রধান শিক্ষককে গণধোলাই দিয়েছে এলাকাবাসী।
আজ মঙ্গলবার উপজেলার মান্দ্রা-রাধাগঞ্জ ইউনাইটেড ইনষ্টিটিউশনে এ ঘটনা ঘটে। সকাল ১০ টায় প্রতিদিনের মত শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলিতে অংশ নেয়। অ্যাসেম্বলি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে না গিয়ে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ ও বিচারের দাবীতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে রাধাগঞ্জ-কুশলা সড়কে গিয়ে অবস্থান নেয়।
এসময় প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন বিদ্যালয়ের আসার সময় এলাকাবাসী তাকে গণধোলাই দেয়।
এ ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিকে ২ কার্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাসুম বিল্লাহ ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা তাদের সামনে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন ও তার ভাই সহকারি শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের পদত্যাগ এবং বিচারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাসুম বিল্লাহ দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত পূর্বক শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরে যায়।
১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মীমজাল ও ফরহাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনের ভাই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিভিন্ন সময় এসব ঘটনা জানাজানি হলেও প্রধান শিক্ষকের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গতকাল সোমবার রাতে দশম শ্রেনির এক ছাত্রীকে মোবাইল ফোনে কুপ্রস্তাব দেন কাজল। ওই ছাত্রী কৌশলে শিক্ষকের এ প্রস্তাব রেকর্ড করে অভিভাবকদের জানায়। পরবর্তীতে এই অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
ওই ছাত্রীর মা বলেন, একজন শিক্ষক হয়ে মেয়ের বসয়ী ছাত্রীকে কিভাবে কুপ্রস্তাব দেয়? শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েসহ বিভিন্ন মেয়েকে কুস্তাব দিয়ে চলেছে বলে আমার মেয়ে আমাকে জানায়। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিনকে জানালেও তিনি তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুরভী বলেন, শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজল ক্লাসে ও প্রাইভেট পড়ার সময় প্রায়ই ছাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ এবং কুপ্রস্তাব দেন । আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে, পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দিতেন। ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে পারিনি।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সাগর শেখ বলে, আমাদের সময়ে শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের উত্যক্ত করার কথা শুনেছি। তখন আমরা কোন প্রমান পাইনি। এবার একটি অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে এই লম্পট শিক্ষকের মুখোশ উন্মোচন হলো। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে জানার জন্য স্কুল ও বাড়িতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন এবং তার ভাই সহকারি শিক্ষক সাইফুদ্দিন কাজলকে পাওয়া যায়নি। দুজনের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তোদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি মোঃ মাসুম বিল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার এস এম শাহজাহান সিরাজকে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে ২ কার্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
(টিবি/এসপি/মে ০৬, ২০২৫)