সাংবাদিক টিপুকে কারাদণ্ড দেওয়া সেই ইউএনও শেখ মোঃ রাসেল বদলী
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার সাতক্ষীরার তালা প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপুকে সাজানো মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়া সাতক্ষীরার তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেলকে বদলী করা হয়েছে। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে রংপুর বিভাগে বদলীর নির্দেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
তালায় কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিক জানান, নয় কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা প্রশাসনের একটি ভবন নির্মাণ কাজ চলার সময় গত ২১ এপ্রিল অনিয়মের অভিযোগ করায় উপসহকারি প্রকৌশলী এসএম মামুন সাংবাদিক টিপু সুলতানকে ছাতা দিয়ে মারপিট করেন। প্রতিবাদ করার একপর্যায়ে দু’জনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। খবর পেয়ে অন্যত্র অবস্থান করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোঃ রাসেল উপসহকারি প্রকৌশলী পকৌশলী মোঃ এসএম মামুন, ঠিকাদার ও ঠিকাদারের শ্রমিকদের কাছে ঘটনা শুনে সাংবাদিক টিপু সুলতানকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ২০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন। প্রতিবাদে ২৩ এপ্রিল ও ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। তালার সাংবাদিকরা মানববন্ধন করতে চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনের মুখে ২৪ এপ্রিল দুপুরে টিপুকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট জামিনে মুক্তি দেন।
এদিকে তালা উপজেলা প্রশাসনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে টিপুর জামিন হওয়ায় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও একটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতার পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে ২৭ এপ্রিল সকাল ১০টায় নাগরিক সমাজের ব্যানারে তালা ডাকবাংলোর সামনে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র বিদে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ঢিঁল ছোঁড়া দূরত্বে মানববন্ধন কর্মসুচি পালন করা হয়। এ কর্মসুচিতে তালা উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মৃণাল কান্তি রায়, সদস্য সচিব অধ্যাপক শফিকুল ইসলা, যুবদল, ছাত্রদল, কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান, কলেজ শিক্ষক, স্কুল শিক্ষক, সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান, সাংবাদিক আব্দুল হাকিমসহ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
একই সময়ে তালা উপজেলা পরিষদের সামনে অফিস ফাঁকি দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের আওতাধীন কর্মকর্তা কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন। তালা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাজীব সরদারের সভাপতিত্বে তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাজমুন্নাহার, কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম, উপসহকারি প্রকৌশলী এসএম মামুন হোসেন, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য দেন। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অফিস ফাঁকি দিয়ে মানববন্ধন করার কোন আইন আছে কিনা তার কোন জবাব দিতে পারেননি।
মানববন্ধনের ভিডিও ফুটেজ ধারণ তরার জন্য জুলুম সাংবাদিকের মাধ্যমে সাতক্ষীরার এক টিভি ক্যামেরাপার্সন পাঁচ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হলেও কাট মানি দুই হাজার টাকা রেখে ওই ক্যামেরাপার্সনকে তিন হাজার টাকা দেন জুলু-ম। তার হাত ঘুরে ড্রোন ক্যামেরা মালিক মোস্তফা আলী পান দুই হাজার দুইশত টাকা। সাংবাদিকদের নামে জুলুম নেন মোটা অংকের টাকা।
মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মোটা অংকের টাকা খরচ করেন। এরপরও দুই থেকে তিনটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় চুপসে যান ওই নির্বাহী কর্মকর্তা। চেষ্টা করেন সাংবাদিকদের ডেকে সমঝোতা করার। তবে মানববন্ধনে জনবল বাড়াতে কয়েকজন জনপ্রতিনিধিকে কাবিটা, কাবিখার কাজ পাইয়ে দেয়ার নিশ্চয়তা দেওয়ার অংশ হিসেবে বদলীর খবর পাওয়ার আগেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবিটা, কাবিখাসহ বিভিন্ন সরকারি কাজের প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা তালা উপজেলা সদরে সকলের মুখে মুখে প্রচারিত হচ্ছে।
(আরকে/এসপি/মে ০৬, ২০২৫)