এএসপি পলাশের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন, আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী স্ত্রীর বিচার দাবি
.jpg)
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : শোকাবহ পরিবেশে র্যাব ৭ এর সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ওইে র্যাব কর্মকর্তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পাড়কোনা মহাশ্মশানে। সেখানে প্রদান করা হয় গার্ড অব অনার। এরপর র্যাবের পক্ষ থেকে মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুপুরে ওই শ্মশানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী স্ত্রী সুস্মিতা সাহার বিচারের দাবি করেছে পলাশের পরিবারের সদস্যরা।
এরআগে এ দিন সকাল সাড়ে ৯ টায় র্যাব-৬ এর কমান্ডিং কর্মকর্তা কমান্ডার শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে লাশবাহী ফ্রিজারে করে প্রয়াত পলাশ সাহার মরদেহ কোটালীপাড়া উপজেলার গ্রামের বাড়ি তাড়াশীতে নিয়ে আসা হয়।
তখন মা আরতী রানী সাহার আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। প্রয়াত পলাশের মা কান্নার মধ্যে বার বার ছেলের বউয়েরনির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বউয়ের নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ। তাই আমার সোনার ছেলে প্রাণ দিয়েছে। আমি সন্তান হারিয়েছি। এ শোক সইতে পারছি না। এর বিচার করতে হবে। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। স্বজনদের কান্নায় ও আহাজারিতে শোকবাহ হয়ে ওঠে সাহা বাড়ির পরিবেশ। সেখানে উপস্থিত পলাশের সহাপাঠী, বন্ধু , প্রতিবেশী, স্বজন ও গ্রামবাসীর চোখে জমে শোকাশ্রু।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কে কোটালীপাড়ার তাড়াশী বাসস্ট্যান্ডে দক্ষিণ পাশে পলাশ সাহার বাড়ি। মেঝে পাকা চারচালা টিনের ঘরের সামনে বসে আর্তনাদ করে স্মৃতিচারণ করছেন বড় বোন রমা সাহা। পাশে মেজো ভাই নন্দলাল সাহা ও বড় ভাই লিটন সাহার স্ত্রী পাশে বসে ছিলেন। তাদের চোখে মুখে ছিল শোকের চিহ্ন।
প্রয়াত পলাশ সাহা কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে পালাশ ছিল সবার ছোট। গত বুধবার র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে এএসপি পলাশ সাহার মরদেহ উদ্ধার করে। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে কর্মস্থলে থাকতেন। গ্রামের বাড়িতে থাকেন তার বড় দু’ ভাই লিটন সাহা ও নন্দলাল সাহা।
কথা হয় পলাশের মেজ ভাই নন্দলাল সাহার সাথে তিনি বলেন, ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে পলাশ ছিলেন সবার ছোট ও আদরের। কোটালীপাড়া থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে। পাড়াশোনা শেষ করে সাব-রেজিস্ট্রার পদে শুরু করে কর্ম জীবন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, ৩৬ তম বিসিএস-এ শিক্ষা ক্যাডার ও ৩৭তম বিসিএস’এ পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়। চাকরির জীবনে পলাশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশে দায়িত্ব পালন করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর তাকে রেপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-৭ বদলী করা হয়। তারপর থেকে পলাশ সেখানে কর্মরত ছিল। দুই বছর আগে পলাশ ফরিদপুর শহরের বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা সুস্মিতা সাহার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের ৬ মাস পর থেকেই শুরু হয় সংসারের পারিবারিক কলহ।
নন্দলাল সাহা আরো বলেন, পলাশ চেয়েছিল মা ও স্ত্রীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকতে। কিন্তু তার স্ত্রী এটিকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। মা বাসায় না থাকতে চাইলে পলাশ কষ্ট পেত। মা বাসায় থাকলে স্ত্রী সহ্য করতে পারত না। এ নিয়েই মাঝে মাঝে ঝামেলা লেগে থাকতো। ভাই চলে গেল, আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি নিজেই ৩৬ তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম। যখন পলাশের একের পর এক চাকরি হচ্ছিল তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি চাকরি করব না উদ্যোক্ত হবো। তাই ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু আদরের ছোট ভাই চলে গেল আর সংসারের সবাইকে সাগরে ভাসিয়ে গেল।
নন্দ অভিযোগ করে বলেন, আত্মহত্যা প্ররোচনা করেছে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তার বিচার দাবি করছি।
তাড়াশী গ্রামের প্রতিবেশী শিব পোদ্দার, সুজিত সাহা বলেন, পলাশ দা নিজের অধ্যবসয়ে বড় হয়েছে। আমরা তাকে আইকন মনে করে, তাকে অনুসরন করতাম। আমাদের মতো অনেকেই তাকে অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পলাশ সাহার এমন মৃত্যু আমরা গ্রামবাসী মেনে নিতে পারছি না । পলাশের মতো নিরীহ ও মেধাবী ছেলে এই গ্রামে ছিল না। তার এ ভাবে চলে যাওয়ায়তে আমরা শোকাহত। শোক সন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর ভাষা নেই।
পলাশের বন্ধু ইকবাল হাসান বলেন, পলাশ আমার বাল্যবন্ধু। লেখাপড়ায় অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। বন্ধুদের সাথে আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করতো। তার অকাল মৃত্যু আমরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। এটা অত্যন্ত দুঃখ জনক, অসহনীয় বাস্তবতা।
প্রসঙ্গত, বুধবার (৭ মে) দুপুরে চট্টগ্রামের নগরের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে অভিযানের প্রস্তুতি চলছিল। এ জন্য নিজের কক্ষে যান পলাশ সাহা। এ সময় সহকর্মীরা গুলির শব্দ শুনে ছুটে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান তাঁকে। নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে পলাশ আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে র্যাব কর্তৃপক্ষ। তাঁর রক্তাক্ত মরদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি চিরকুট ও রিভলবার। সেখানে তার মৃত্যুর জন্য নিজেই দায়ী বলে উল্লেখ করেন।
ওই চিরকুটে আরো উল্লেখ ছিলো, আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের উপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো- অর্ডিনেট করে।
(টিবি/এসপি/মে ০৮, ২০২৫)