শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ প্রসঙ্গে অন্তবর্তী কালীন সরকারের কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছেন তাদের শুধু পদত্যাগ না, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। যদি তাদের শাস্তির আওতায় আনতে না পারি তাহলে আমি পদত্যাগ কর চলে যাবো।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আইশৃঙ্খলা কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে তিনি এসব কথা বলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট এ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। দেশবাসী যে পরিস্থিতিতে আমাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি থেকে এখন পর্যন্ত অনেক উন্নতি করার চেষ্টা করেছি।'

এরপর দিনাজপুর গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন ও মতবিনিময় সভায় যোগ দেন।কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

এর আগে দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মকলেসপুর গ্রামে বোরো ধান ব্রি-ধান-৮৮ কর্তনের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বোরো ধান ব্রি-ধান-৮৮ কর্তনের উদ্বোধনি অনুষ্ঠানে বলেন, খুব শীঘ্রই কৃষিজমি সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। কারণ মানুষ বাড়ছে,কিন্তু জমি কমছে। তারপরও কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন ও কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্যের মজুদ বাড়ছে এবং আমদানি নির্ভরশীলতা কমেছে। কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে সেচ খরচ কমিয়ে দিতে হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দূর্নীতি কমিয়ে আনতে হবে। ভূমি ব্যবহার নীতিমালায় কৃষিজমি সুরক্ষায় নতুন একটি আইন কিছুদিনের মধ্যে প্রণয়ন করা হবে। পাক-ভারত উত্তেজনায় দেশের সীমান্ত সম্পূর্ন সুরক্ষিত রয়েছে। সীমান্ত এলাকার কৃষদের ভীতি হওয়ার কোন কারণ নেই। তারা নিশ্চিন্তে তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।'

কৃষি ও স্বারাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরো বলেন, কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম ও কৃষি সংশ্লিষ্টদের প্রচেষ্টার কারনে আমাদের ফসল সন্তষজনক উৎপাদন হচ্ছে। আগে যেখানে ৭ কোটি মানুষ ছিলো,সেখানে এখন ১৮ কোটি হয়েছে। তারপরও খাদ্যের ঘাটতি নেই। আমদানি নির্ভরতা কমেছে। গতবছর বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে আমাদের চাল আমাদানি করতে হয়েছে। এবার ধানের উৎপাদন ভাল হওয়ায় আমাদানি করার প্রয়োজন হবেনা।

এসময় কৃষি মন্ত্রনালয়ের সচিব এমদাদুল্লাহ্ মিয়ান, বরেন্দ্রে’র মহা-পরিচালক মোজাফ্ফর হোসেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত: চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৭৪ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে ইরি বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অনুক‚ল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এবার লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত ২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ অর্জিত হয়েছে। অর্জিত লক্ষমাত্রার মধ্যে হাইব্রিড ২৯ হাজার ১২০ হেক্টর এবং উপশী এক লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ অর্জিত হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, হাইব্রিড প্রতি হেক্টরে ৫ মেট্রিক টন এবং উফশী প্রতি হেক্টরে ৪.৫১ মেট্রিক টন। অর্জিত ইরি-বোরো ধান থেকে মোট ৮ লাখ ২ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এখন পর্যন্ত জেলায় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদনের হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

দিনাজপুর অঞ্চলে এবার গত দুই যুগের তুলনায় সর্বোচ্চ ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই, ফলন দেখে উজ্জীবিত হয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম।

এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, এবার যেন আল্লাহর রহমত নেমে এসেছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

(এসএস/এসপি/মে ০৮, ২০২৫)