গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়
৩ কর্মচরীর বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুদক
.jpg)
তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে ৩ কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোঃ মশিউর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা জানান, বিআরটিএ গোপালগঞ্জ জেলা কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। এ প্রেক্ষিতে ওই কার্যালয়ে গত ৭ মে অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রথমে আমরা সাদা পোশাকে অফিসটি পয্যাবেক্ষণ করি। ঘুষ নিয়ে কাজ করা, গ্রাহককে সঠিক তথ্য না দেওয়া, গ্রাহকদের দিনের পর দিন ভোগান্তিতে রাখা, দীর্ঘ বছর একই অফিসে অফিসসহকারীদের কাজ করা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ সম্পদ অর্জন, দালাল চক্রসহ বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে ওই অভিযানে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, বিগত ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল পযর্ন্ত গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে মোট ২ হাজার ৮৮৪টি লাইসেন্স-এর আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে অনুমোদনের অপেক্ষাধীন রয়েছে ৬৭টি ও বাতিল করে আবেদনকারীকে ফেরত দেয়া হয়েছে ৪৭টি। বাতিল ও অপেক্ষাধীন আবেদনসমূহ যাচাই করা হচ্ছে। বিআরটিএ গোপালগঞ্জ অফিসের পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। পত্র ইস্যু রেজিস্ট্রারে অসংখ্য নম্বর ফাঁকা রাখা হয়েছে যা ভবিষ্যতে ব্যবহার করে দুর্নীতি করার জন্য।
দুদক কর্মকর্তা আরো বলেন, বিআরটিএ অফিসের উচ্চমান সহকারী শরীফুল ইসলাম এ অফিসে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় ৯ বছর এখানে কর্মরত রয়েছে। তার বাড়িও এখানে আর কর্মরতও এখানে, যে কারণে দুর্নীতির প্রচলনটা এখানে তৈরী হয়েছে। অফিস সহকারী লিখন শেখ তিনি ২০২৩ সাল থেকে এখানে কর্মরত রয়েছে। তার বাড়ি নড়াইল। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি পরিবারসহ খুলনায় থাকেন, তিনি প্রতিদিন এখান থেকে যাতায়াত করেন। তার খুলনায় বাড়ি রয়েছে, নড়াইলে প্রচুর জমি কেনা রয়েছে, গাড়ী আছে এসব তথ্য আমরা পেয়েছি।একজন ছোট কর্মচারী হয়েও কিভাবে খুলনার মত বড় শহরে থাকেন এবং খুলনায় প্রতিদিন যাতায়াত করেন। তার যে অর্থিক সামর্থ্য তার সাথে সামঞ্জস্য নয়। অফিস সহায়ক ইয়াছিন শেখ তার বিরুদ্ধে গত বছর দুদকের গণশুনানীতে অভিযোগ এসেছিলো।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর দুদকের কমিশনার বদলীর জন্য বলেছিলেন, আমরাও চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন এক কারণে তিনি এখনো এই অফিসে বহাল রয়েছেন। গোপালগঞ্জ বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক পদটিতে বরগুনা জেলার সহকারী পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তিনি সপ্তাহে ১ দিন অফিস করায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি নিয়মতি অফিসে না থাকায় অফিসের কর্মচারীরা দালালদের সাথে মিশে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে জনভোগান্তি তৈরী করছেন।
এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এ অভিযানে আমরা অনেকগুলো অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকের কাছে সুপারিশ দিয়েছি। আমরা দুদকের প্রধান কায্যালয় থেকে বিআরটিএ’র প্রধান অফিসে সুপারিশগুলো দিবো। যাতে এই সমস্যাগুলো দূর করে জনগনকে সেবা প্রদান করা যায় এবং বিআরটিএ থেকে সেবা পেতে পারে। এছাড়াও এই অফিস দালাল মুক্ত করা হবে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যপক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান দুদকের এই কর্মকর্তা।
বিআরটিএ অফিসের উচ্চমান সহকারী শরীফুল ইসলাম, অফিস সহকারী লিখন শেখ ও অফিস সহায়ক ইয়াছিন শেখ তাদের অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
(টিবি/এসপি/মে ১১, ২০২৫)