স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : 'দেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ যে দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তার প্রতিবাদে এবং ইসলামী আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ঋণ শোধের এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।' - এমন দৃঢ় বক্তব্য উঠে এলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলার শহর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত শোকরানা সমাবেশ থেকে।

আজ রবিবার বিকেলে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে যশোর দড়াটানা ভৈরব চত্বরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল। তিনি তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের অতীত কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, ইসলামপন্থী রাজনীতি এবং আলেম সমাজের ওপর বারবার আঘাত হেনেছে। পতিত স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন ইসলামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে হামলা, মামলা, খুন-গুম, ফাঁসি, গ্রেপ্তার এবং হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছে।

নন্দিত আলেমে দ্বীন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক বিচার ও ফাঁসির ঘটনাকে অধ্যাপক গোলাম রসুল এদেশের ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেই থেমে থাকেনি। পতনের আগ মুহূর্তে জামায়াত এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে, আলেম-ওলামাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। আজ আল্লাহর হুকুমে সেই আওয়ামী লীগ নিজেই বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত নিষিদ্ধ হয়েছে।

অতীতের অত্যাচারী শাসকদের দৃষ্টান্ত টেনে জেলা আমীর বলেন, যেভাবে যুগে যুগে আল্লাহ অত্যাচারীদের ধ্বংস করেছেন। তেমনিভাবে বর্তমান 'জুলুমবাজ' সরকারের পতনের পথ সুগম হয়েছে। তিনি হজরত মুসা (আ.), হজরত ইব্রাহিম (আ.) ও হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়ের শাসকদের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

অধ্যাপক গোলাম রসুল দ্বীনের কর্মীদের ধৈর্য ও সাহস ধারণের আহ্বান জানান এবং ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা যে পথের মুসাফির, সে পথ মুসা (আ.)-এর, সে পথ মুহাম্মদ (সা.)-এর। অত্যাচারীর পতন হবেই। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবেই ইনশাআল্লাহ।

শহর শাখা জামায়াতের সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং শহর সেক্রেটারি ইমরান হোসাইনের সঞ্চালনায় সমাবেশে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ আবু জাফর সিদ্দিকী, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, মাওলানা রেজাউল করিম, অধ্যাপক মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য স্থানীয় নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতির পর একটি আনন্দ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই সমাবেশ ও আনন্দ মিছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া ও উল্লাস সৃষ্টি করে।

(এসএ/এসপি/মে ১১, ২০২৫)