রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : থানায় সোপর্দের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এখনো মুক্তি মেলেনি ভারত থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মান্দারবাড়িয়া চরে ঠেলে দেওয়া ৭৫ বাংলাদেশীর।

সোমবার সকাল দশটায় পরিবারের কাছে তাদের হস্তান্তরের কথা থাকলেও সোমবার রাত সাড়ে১০ টা পর্যন্ত তাদেরকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে যেয়ে পুশইনকৃত এসব বাংলাদেশীর অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে কোস্টগার্ডের অবহেলার কারণে সকালে প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও বিএসএফ এর পুস ইন করা এসব বাংলাদেশী বাড়িতে ফিরতে পারেনি। নড়াইল জেলার

কালিয়া থানার মাদুভাশা গ্রামের লিটন মিয়ার ভাগ্নে নাজমুল হোসেন জানান, স্বজনদের নেওয়ার জন্য রোববার রাত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে মোবাইলে অবহিত করা হয়। সেই মোতাবেক সোমবার সকালে তারা শ্যামনগর থানা পৌঁছান। তিনি অভিযোগ করেন, বেলা দশটার দিকে তার মামাসহ অন্যদের স্বজনদের হাতে উঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে জানানো হয় বিকাল তিনটায় প্রেস কনফারেন্স এর পর স্বজনদের কাছে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীদের হস্তান্তর করা হবে। তবে বিকাল পেরিয়ে রাত দশটা বাজলেও তার অসুস্থ মামাসহ অন্য কাউকে হস্তান্তর করা হয়নি।

নাজমুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, কোস্ট গার্ডের খামখেয়ালীপনার কারণে তাদের সজনরা সকাল থেকে প্রচন্ড কষ্ট ভোগ করছে। শুধু নিজেদের ক্রেডিট নেওয়ার কোস্টগার্ডের মতন একটা সুশৃঙ্খল বাহিনী অসুস্থ এতগুলো মানুষের সাথে এমন অমানবিক আচরণ করল।

ফিরে আসা বাংলাদেশী আবু হিলালের খালু মিজানুর রহমান জানান, ভারতীয় কোস্টগার্ড এবং বিএসএফ যে পরিমাণ নির্যাতন করেছে এই একদিনে বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড তার থেকে কোন অংশে কম নির্যাতন করলো না। মারধর না করেও ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে একটা দিন অসুস্থ মানুষগুলোকে বিলম্ব করিয়ে চরম অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে।

ফিরে আসা বাংলাদেশীদের মধ্যে অনিক শেখ ও আবু বক্কার বলেন বিএসএফ এবং ভারতীয় কোস্টগার্ডের লাঠি পেটায় অনেকের পীঠ ও পাছার চামড়া উঠে গেছে। সকাল থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা তীব্র গরমের মধ্যে এসব অসুস্থ মানুষগুলোকে বসিয়ে রেখে ভোগান্তিতে ফেলেছে কোস্টগার্ড সদস্যরা।

শুধুমাত্র বাহবা নেওয়ার জন্য তাদের এমন অমানবিক আচরণ নিঃসন্দেহে নিন্দাজনক। কোস্টগার্ডের এমন আচরণের তদন্ত করে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন অনীক ও আবু বক্কর এর মত অপারপার ভুক্তভোগী এবং তাদের স্বজনরা।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানান, সেই সকাল থেকে নিউজ কভার করার জন্য কোচ গার্ডের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের অপেক্ষমান রাখা হয়। পরবর্তীতে বিকাল তিনটায় প্রেস কনফারেন্সের কথা জানানো হয়। সন্ধ্যার কিছু আগে রাত ৯ টা ৩০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনের বিষয় সাংবাদিকদের প্রেস নোট সরবরাহ করা হয়। তবুও রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত শ্যামনগর থানা চত্বরে অপেক্ষা করেও কোস্টগার্ডের কর্মকর্তাদের দেখা মেলেনি। ফিরে আসা বাংলাদেশীদের নিতে আসা স্বজনরা এ সময় কোস্টগার্ডের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন।

এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মংলা আঞ্চলিক কার্যালয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর মোল্ল্যা বলেন,খুব শীঘ্র সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

(আরকে/এএস/মে ১৩, ২০২৫)