আকাশে মেঘ হলেই স্কুল ছুটি!

শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : আকাশে মেঘ দেখলে বিনা নোটিশেই ছুটি হয়ে যায় স্কুল। শিক্ষার্থীরা তাড়াহুড়ো করে স্কুল ছেড়ে ছুটে যান নিজ নিজ বাড়িতে। শুনতে অবাক লাগলেও এমন ঘটনা ঘটে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দীর্ঘ এক দশক আগে থেকে একতলা বিশিষ্ট এ স্কুলভবনের ছাঁদে ফাটল দেখা দিলেও সংস্কার বা নতুন ভবন কপালে জোটেনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কপালে। তবে ছাদের প্লাস্টার খুলে কপাল ফেটেছে অনেক শিক্ষার্থীর।
এমন করুণ দশা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের তামিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের।
আকাশে মেঘ দেখলেই ঝড়-বৃষ্টিতে বইখাতা ও নিজের শরীর বাঁচানো,সেই সাথে দিনরাত ধসে পড়া ছাঁদের প্লাস্টার খসে বা বিম ধসে জীবনহানির ভয় সারাক্ষণ তাড়া করছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। ফলে ব্যহত হচ্ছে পাঠদান,ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। নানাসময় বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপন করছে বলে এলাকাবাসি ও অভিভাবকরদের অভিযোগ।
সরেজমিন দেখা যায়,ভবনের প্রতিটি কক্ষের ছাঁদের প্লাস্টার খসে পড়ছে। বেড়িয়ে পড়েছে রড। কোন কোন কক্ষের বিম ফেটে প্লাস্টার খসে পড়ায় লোহার জংধরা রডগুলো দাঁত বের করে হাসছে। সম্প্রতি ক্লাস চলাকালিন সময়ে এক শিশু শিক্ষার্থীর মাথায় প্লাস্টার ভেঙে পড়ায় তার মাথায় বেশ কয়েকটা সেলাই দিতে হয়েছে। মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে ওই শিক্ষার্থী।
স্কুলে সংবাদকর্মীদের যাবার কথা শুনে মুহুর্তেই জড়ো হয়েছিলেন অভিভাবক লাইলি খাতুন, ছবিরন নেছা, ঝর্ণা খাতুন,বয়োবৃদ্ধ আব্দুর রাজ্জাক মোল্যাসহ আরো অনেকে। তারা জানালেন,৩৩ শতাংশ জমিতে এলাকার শিক্ষানুরাগী সিরাজউদ্দিন মোল্যা ১৯৭৮ সালে এই স্কুলটিপ্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে সরকারিভাবে তিনকক্ষের একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। এরইমধ্যে ভবনের ছাঁদে ফাটল ধরতে শুরু করে। ছাঁদ ও বিমের প্লাস্টার খসতে খসতে এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে,ভবনটি যেকোন সময় ধ্বসে প্রাণহানির ভয় রয়েছে। তাই স্থানীয় অনেক অভিভাবকই তাদের শিশু সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্কুলের আশেপাশে বা শিক্ষকদের কমনরুমে বসে থাকেন।
প্রধান শিক্ষক আহাদ আলীসহ অন্যান্য শিক্ষকরা জানালেন, পাকা রাস্তার পাশে মনোরম পরিবেশের এ স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেমন লেখাপড়ায় ভালো,খেলাধুলার ক্ষেত্রেও জেলায় শ্রেষ্ঠ স্থান অধিকার করে থাকে। তাদের মতে,আকাশে মেঘ দেখা দেয়ার সাথে সাথেই বিনা নোটিসে ছুটি হয়ে যায় তাদের স্কুল। আর ঝড় শুরু হলেতো কথায় নেই। অভিভাবকরা নিজেরা ছুটে এসে শিশুদের বাড়িতে নিয়ে যান, এটা নিয়মিত ঘটনা।
শিক্ষকরা জানালেন, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিষয়টি বহুবছর ধরে উপজেলা কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট উর্ধতন র্কর্তৃপক্ষকে লিখিত এবং মৌখিকভাবে জানালেও তারা কার্যকরি ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে তারা বুঝতে পারছেন না।’
প্রধান শিক্ষক আহাদ আলী জানালেন,‘স্কুলভবনের সামনের ছোট এবং একমাত্র খেলার মাঠটি সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় বিধায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী-শিক্ষক কেউই চলাচল করতে পারেনা। তখন কোনপ্রকার খেলাধুলার আয়োজনও করা যায়না বলে। দ্রুতই নতুন ভবন না হলে পাঠদান বন্ধ হয়ে যাবে। আবার যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটারও সম্ভাবনা থাকবে।’
এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিশ্বজিত সাহার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আগামি মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
(এসই/এএস/মে ১৭, ২০২৫)