রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : এখন যা করছে সেটা একেবারেই ঠিক করছে না, ভবিষ্যতে ওর (সংবাদকর্মী জুবায়ের মাহমুদ) পরিণতি মোটেও ভাল হবে না’। ‘এখন অন্যের কথায় যেসব নিউজ করছে, ফেসবুক লাইভে যেয়ে আমার বালু উত্তোলন নিয়ে কথা বলছে, সেটার জন্য ও’কে (জুবায়ের) ভুগতে হবে’। এসব কথা বলে সাংবাদিক জুবায়ের মাহমুদকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিয়েছে আব্দুর রহমান বাবু ওরফে ‘বালু বাবু’।

আজ সোমবার সকালের দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নওয়াবেঁকী খেয়াঘাটে এ হুমকির ঘটনা ঘটে।

এর আগে সকাল আটটার দিকে অনলঅইন পোর্টাল ‘দ্যা এডিটরস ডটনেট’-এর লাইভে এসে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন নিয়ে কথা বলেন জুবায়ের। তিনি নওয়াবেঁকী-বিড়ালাক্ষী গ্রামের পার্শ্ববর্তী খোলপেটুয়া নদীর পাড়ে দাড়িয়ে উক্ত লাইভে যুক্ত হন। এসময় লাইভ সম্প্রচারে জুবায় জানান, কয়েকদিন পুর্বে আশাশুনির হিজলার চরের সুনির্দিষ্ট একটি দাগ ইজারা সংক্রান্ত দরপত্র জমা পড়েছে।

জানা গেছে, সর্বোচ্চ দরদাতা (এক কোটি ১৪ লাখ) হিসেবে ইজারা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন আব্দুর রহমান বাবু ও তার সহযোগীরা। কিন্তু কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই সংশ্লিষ্টরা বালু উত্তোলন শুরু করেছেন এবং দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর ভিতরের ‘গোমর ফাঁস’ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে আব্দুর রহমান তার দুই সহযোগীকে নিয়ে জুবায়ের মাহমুদের পিতা জাহাঙ্গীর গাজীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেয়ে ছেলে বিষয়ে এমন হুমকি প্রদান করেন।

জাহাঙ্গীর গাজী জানান, তার একটি ছোট চায়ের দোকান রয়েছে খোলপেটুয়া নদীর চরে। তিনি সকালে মানুষকে চা খাওয়ার সময় বাবু আ্কস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হয়ে খুবই রাগান্বিতভাবে তার ছেলের ভবিষ্যত পরিণতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেন। তিনি জানান, ছেলেকে বার বার নিষেধ করেছেন সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতে। কিন্তু লেখাপড়ার পাশাপাশি সে সাতক্ষীরার একটি জনপ্রিয় নিউজ পোর্টালে কাজ করে। কতৃপক্ষের নির্দেশনায় ছেলে অনিয়ম নিয়ে কথা বলায় এখন হুমকি দেয়া হচ্ছে। এতে ছেলেসহ নিজেকে তিনি অনিরাপদ ভাবছেন বলেও দাবি করেন।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বার বার চেষ্টা সত্ত্বেও আব্দুর রহমান বাবুর মুটোফোনে প্রবেশ করা যায়নি।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগে করেছেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে রাজনীতি শুরু করলেও আব্দুর রহমান বাবু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের এক এমপির হাতে ফুল দিয়ে আ.লীগে যোগ দেন। তবে ৫ আগষ্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কয়েক বিএনপি নেতার আশ্রয় প্রশয়ে আবারও প্রকাশ্যে এসেছেন।আবু তালেব নামের এক ব্যক্তি চৈত্রের ৩১ তারিখে গত বছরের ইজারার মেয়াদ শেষেও বাবু বালু উত্তোলন বন্ধ করেনি। এসময় অসংখ্য বালু উত্তোলনকারী বোট মালিক অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে অস্বীকৃতি জানালে বাবু তাদেরও হুমকি দেন। সম্প্রতি সে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে ম্যানেজ করে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আগের মতই অবৈধ কার্যক্রম চালু করেছে।

জাহিদ হাসান নামের এক যুবক জানান, বাবু এবার নিজের নামে বালুমহালের ইজারা দাবি করেনি। বরং শ্যামনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙুলের নামে বালুমহাল ইজারা চেয়েছেন। তিনি আরও দাবি করেন, সামনে যুবদল নেতাকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করলেও বাবু সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত সাতক্ষীরা ও ঢাকার কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নাম ভাঙিয়ে তার উপর তাদের আশীর্বাদ রয়েছে প্রচার করে আবারও প্রশাসনের উপর খবরদারি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া আশাশুনির হিজলার চর ডাকের জন্য চেষ্টা চালালেও বাবু ফারুকসহ তার অপরাপর লোকজন দিয়ে ভাঙন কবলিত শ্যমানগরের বিভিন্ন নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন।

এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সুত্রের দাবি উচ্চ পদস্থ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সাথে সখ্যতার সুযোগককে কাজে লাগিয়ে বাবু তার নিজস্ব একটি বলয় গড়ে তুলেছে। সেই সিন্ডিকেটকে কাজে লাগিয়ে বাবু আবারও উপকুলে বেপরোয়া আচারণ শুরু করেছে।

একই সুত্রের দাবি বাবুর সাথে গভীর সম্পর্কের সুযোগে অন্যরা একটা নির্দিষ্ট মুল্য লিখে দরপত্র জমা দেয়। তবে ইজারা প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্তৃপক্ষের মধ্যে থাকা নিজস্ব লোকদের কারনে বাবু ফাঁকা দরপত্র জমা দেয়। পরবর্তীতে অন্যদের দরপত্রের মুল্য নিশ্চিত হয়ে সামান্য কিছু বৃদ্ধি করা মুল্য ফাঁকা অংশে বসিয়ে দেয়। এভাবে গত কয়েক বছর বাবু বড় বড় রথি-মহারথিকে ঘোল খাইয়ে শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনির বালুমহাল নিজের কব্জায় রাখার সংস্কৃতি চালু করেছে বলেও সুত্রটির দাবি।

এসব বিষয়ে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনোয়ারুল ইসলাম আঙুর জানান, তিনি তার গাজী এন্টারপ্রাইজের নামে বালু মহাল ইজারা চেয়ে দরপত্র দাখিল করেছেন। ইতিমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বালুমহাল ইজারা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এসব বিষয়ে বাবুর পুর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় তিনি নিজের কাজে বাবুকে ব্যবহার করলেও বালুমহালে তার কোন অংশগ্রহণ নেই।

(আরকে/এসপি/মে ১৯, ২০২৫)