সঞ্জীব কুমার দাস, কাপাসিয়া : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলতি মৌসুমে মৌসুমী ফল হিসাবে পরিচিত  লিচু‘র বাম্পার ফলন হয়েছে।  গাছের ডালে থোকায় থোকায়  লিচু গুলো লালচে রং হওয়ার দেখতে খুবই অপরুপ মনে হচ্ছে। এবার লিচু‘র ফলনে কৃষকদের মনে আনন্দের বন্যা বন্যা যাচ্ছে। এছাড়া বাজারের লিচুর দাম ভাল পাওয়ার কৃষকের চোখে মুখে হাসির ছাপ দেখা যাচ্ছে।

কাপাসিয়া অঞ্চলটি আবহাওয়ার দিক দিয়ে লিচুর জন্য বেশ উপযোগি হওয়ায় এখানে বিশাল পরিমাণে লিচুর বাগান গড়ে উঠেছে। উপজেলার দূর্গাপুর, রাণীগঞ্জ, নাশেরা, নাজাই, রাওনাট, চাঁপাত, চাঁদপুর, ভাকোয়াদী, আমরাইদ, টোক, সিংহশ্রী, খিরাটীসহ বিভিন্ন গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিচুর ফলন হয়ে থাকে।

অত্র জেলার বাহিরে রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় কাপাসিয়া সুস্বাধু লিচুর একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। এই এখানকার লিচু রসালো ও স্বাদ বেশি হওয়ায় এর সুনাম রয়েছে সারাদেশে। লিচু চাষ করে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছেন। উপজেলার রানীগঞ্জ, নাজাই, বাড়ৈগাঁও, নাশেরা, দূর্গাপুর এলাকার বিভিন্ন লিচু বাগান গুলো থেকে লিচু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য পাঠাতে প্রস্তত করে টুকরিতে ভরছে। প্রতিদিন এই এলাকা থেকে ৪/৫টি ট্রাক বোঝাই লিচু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় বলে জানায় কৃষকরা।

এলাকার লিচু বাগান মালিক হেলাল, বেলায়েত, মালেক সহ অন্যান্যরা জানান, দীর্ঘ ২৫/৩০ বছর ধরে লিচু বাগানে ভাল ফলন হয় এতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। তারা জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন চাষীদের মৌসুমী ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এবং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌসুমী ফল চাষের নিয়ম কানুন সম্পর্কে সচেতন করেন।

তারা আরো জানান, স্থানীয় বাজারে ১০০টি বুম্বাই , কালিপুরি লিচুর খুচরা বিক্রয় মূল্য ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। চায়না থ্রি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং দেশি লিচুর মূল্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে । দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকার সরাসরি বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তারা।

তারা বলেন, কৃষকদের যদি লিচু চাষের জন্য সরকারিভাবে উন্নত মানের কৃষি সরঞ্জামাদি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তবে কৃষকরা অনেক উপকৃত হবে বলে জানান লিচু চাষীদের অনেকেই ।

এলাকার চাষীরা লিচু সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলের চাষ করে এই অঞ্চলে। এরমধ্যে লিচু, কাঁঠাল, আনারস ও পেঁয়ারা হচ্ছে কাপাসিয়ার প্রসিদ্ধ মৌসুমি ফল। এ ফল গুলো কাপাসিয়ার চাহিদা মিটিয়ে দেশ ও দেশের বাহিরে রপ্তানি করা হয়। এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন কুমার বসাক জানান, কাপাসিয়ার কৃষকেরা অনেক পরিশ্রমি। ভাল ফলন পাওয়ার জন্য তারা অনেক বেশি চেষ্টা ও পরিশ্রম করে। আমিও সব সময় চেষ্টা করি তাদের কৃষি কাজে ভাল ফলনের জন্য পরামর্শ ও সরকারি সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার জন্য কাজ কওে থাকি। চলতি বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক লিচু গাছেই নষ্ট হয়ে যায় এবং অনাবৃষ্টি ও খরায় লিচুর আকার খুব বেশি ভাল হয়নি বলে তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান গত ২৩-২৪ অর্থ বছরে কাপাসিয়ায় ৩২৭ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ১ শ ২৮ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদিত হয়েছে। এবার ২৪-২৫ অর্থ বছরে গত ২৩-২৪ অর্থ বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

(এসকেডি/এএস/মে ২০, ২০২৫)