ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গরম কাল আসার সাথে সাথে ভয়াবহ আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে মশার বিস্তার। এরইমধ্যে হয়েছে সামান্য বৃষ্টি। এই পরিস্থিতিতে দিন-রাতে সবসময় মশার কামড়ে নাজেহাল ঈশ্বরদীবাসী। দিনের বেলায়ও অফিস, দোকান, বাসা-বাড়িতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। আর সন্ধ্যা হলেই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে কয়েকগুন। নিয়মিত নর্দমা ও জলাশয়গুলো পরিষ্কার না করার অভিযোগ পৌরবাসীর। প্রতিবছর মশক নিধনে ফগার মেশিন ব্যবহার করা হলেও ওষুধ না থাকায় চলতি বছর এখন পর্যন্ত মশা মারার কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মশা নিধনের জন্য প্রতি বছর বাজেট থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

পৌরবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথেই মশার উপদ্রব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। কয়েল, স্প্রে বা মশারি টাঙ্গিয়েও মশার উৎপাত থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী। কেউই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না। মশার উপদ্রব বাড়লেও মশা নিধনে পৌরসভা কার্যকরী কোনো ভূমিকা পালন করছেন না। এরইমধ্যে বর্ষাকাল সমাগত। এখনি পদক্ষেপ নেয়া না হলে এডিস মশা বিস্তার লাভ করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার সম্ভাবনা।

পৌরসভা সূত্র জানায়, ঈশ্বরদী পৌর এলাকায় বছরে এক থেকে দুইবার ফগার মেশিন নিয়ে মশা নিধনের ব্যবস্থা করা হয়। তবে এবছর পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগ এখনও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। একারণে মশার উৎপাত বেড়েছে।

পৌর শহরের নূরমহল্লার সৌরভ দেবনাথ বলেন, বাড়িতে ও এলাকায় এত মশার উপদ্রবের কারণে সন্ধ্যার পর বসে থাকা যায় না। কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। চারদিকে শুধু মশা আর মশা।

আমিনপাড়া এলাকার শিক্ষার্থী অর্নেট প্রধান বলেন, সারাদিন মশার উপদ্রব থাকলেও সন্ধ্যার পরপরই এই উৎপাত ব্যাপকভাবে বেড়ে পায়। ফলে সন্ধ্যায় মশার কয়েল জ্বালিয়ে বা স্প্রে ছিটিয়ে পড়তে বসতে হচ্ছে। এমনকি মশার উৎপাতে নাজেহাল হয়ে মশারি টাঙ্গিয়ে লেখাপড়া করতে হচ্ছে। অনেকই মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

ব্যবসায়ী আবীর হোসেন বলেন, ড্রেন, ডোবা, নালা নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। গ্রীস্মকাল আসার আগে থেকে যদি পদপেক্ষ নিত, তাহলে মশার উপদ্রব এতো হতো না। সিএনজি ষ্ট্যান্ডের চা বিক্রেতা বলেন, মশার উপদ্রব এত বেশি যে, চা খেতে খরিদ্দার আসলে বেশিক্ষণ কেউ বসতে পারে না।

ঈশ্বরদী পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগের রুহেল হোসেন বলেন, মশার প্রজনন মৌসুমে মশা নিধনে ফগার মেশিনে ওষুধ দেওয়া হয়। কিন্তু বাজেট বরাদ্দ না থাকায় এবার ফগার মেশিনে ওষুধ ছিটানো হয়নি। প্রতিটি ওয়ার্ডের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সারা বছরই নালা-নর্দমা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম চলে।

পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, ওষুধ না থাকায় এবার ফগার মেশিন দিয়ে মশা মারা হয়নি। তবে বছরব্যাপী মশা নিধনের যে কার্যক্রম তা চলমান রয়েছে। ফগার মেশিনে ওষুধ ছেটানো কার্যক্রম শুরুর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা: শাহরিয়ার শিশির জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত মশা বংশ বিস্তার ঘটায়। এসময় মশার কামড় জনিত রোগে মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়। মশার কামড়ে মানুষ অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। বর্ষায় এডিস মশার বিস্তার ঘটে। যা ভয়াবহ, এজন্য সকলকে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

(এসকেকে/এএস/মে ২০, ২০২৫)