রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তপশীল বর্ণিত জমি ডিসিআর না দেওয়ার উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানছেন না স্থানীয় ভূমি অফিস। এমনকি  ৫ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে সংশ্লিষ্ট তহশীলদার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ঘর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ওই জমি অন্যত্র ডিসিআর দিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানা সদরের মৃত কালিপদ সাধুর ছেলে পিযুস কুমার সাধু জানান, পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত শাকদাহ মৌজার (পাটকেলঘাটা বলফিল্ডের পাশে) এসএ ১৮২৪সহ তিনিটি দাগের এক একর ৭৩ শতক সম্পত্তি ১৯৭৭ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ওই জমিতে তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওই জমি থেকে সাত শতক জমি অন্যত্র বিক্রি করেছেন। ২২ শতক জমি এলজিইডি অধিগ্রহণ করেছে। একপর্যায়ে তিনি জমির মালিকানা ফিরে পেতে তিনি ও তার মাসহ পাঁচজন বাদি হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অর্পিত সম্পত্তি ট্রাব্যিুনালে ২১৮৪/১৩ নং মামলা করেন। ওই জমি পাটকেলঘাটা সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে ডিসিআর দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করলে বাদি পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি বিচারক আয়েশা আক্তার মৌসুমী মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমি ডিসিআর দেওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশ দেন। ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর আদালত ওই জমি বাদিপক্ষের বলে রায় ও ডিক্রী দেন। পরবর্তীতে ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল (৪২/২০) মামলা করেন।

পীযুস সাধুখাঁ আরো জানান, আপিল মামলা চলমান থাকাকালিন স্থানীয় ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের তহশিলদার তারক সরকার ওই জমি ডিসিআর দেওয়া হবে বলে প্রচার দেন। একপর্যায়ে ডিসিআর বন্ধ করতে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার জন্য তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। এমনই অবস্থার মধ্যে গত ২৭ এপ্রিল পাটকেলঘাটা সহকারি কমিশানর (ভ‚মি) মোঃ মাসুদুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দিয়ে যান ওই অফিসের পিওন আব্দৃুল গফুর। তাকে সাত দিনের মধ্যে ইজারার বকেয়া টাকা পরিশোধ ও নতুন করে ডিসিআর নেওয়ার জন্য বলা হয়। প্রতিকার চেয়ে তিনি পরদিন তার আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন। জেলা ও দায়রা জজ শুনানীর জন্য ২১ মে দিন ধার্য করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিবাদীসহ শিবনাথ নামে তাদের এক ভাড়াটিয়াকেও তিন বার নোটিশ করেন। সর্বশেষ রবিবার বিকেল আড়াইটার দিকে আব্দুল গফুর তার কাছে যে নোটিশ নিয়ে যান তাতে তিন দিনের মধ্যে ইজারার টাকা পরিশোধ ও নতুন করে ডিসিআর না কাটলে তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করার কথা বলা হয়। তিনি নোটিশটি পড়ে গ্রহণ না করায় পিওন আব্দুল গফুর তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে কয়েক জায়গায় জানিয়ে হুমকি দেন। এতে তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তার ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ জমি অন্যত্র ডিসিআর দেওয়ার হুমকি দিলে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানী শেষে বিচারক মোঃ নজরুল ইসলাম মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার নির্দেশনা দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাটকেলঘাটা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের পিওন আব্দুল গফুরের মুঠোফোনে যোগোযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

পাটকেলঘাটা ভ‚মি অফিসের তহশীলদার তারক চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ি তারা সকাল প্রকার সরকারি জমি ডিসিআর দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাটকেলঘাটা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাসুদুর রহমান বলেন, সরকারি জমি ডিসিআর দেওয়ার জন্য (২০০১ সালের সংশোধিত ২০১৩ এর ১৪(১) ধারা মতে) কাজ করছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে জরুরী বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা ছাড়া নিজের কোন আত্মীয়কে দিয়ে পিযুস সাধু ডিসিআর নেবেন বলে তাকে জানিয়ে যেয়েও পরে আসেন নি। যে কারণে আবারো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে কেউ ঘুষ দাবি করে থাকলে বা নোটিশ দিতে যেয়ে হুমকি দিলে কেউ তার কাছে অভিযোগে করেনি। তবে ২১ মে শুনানীর দিন তাকে জানালে তিনি নোটিশ করতেন না।

(আরকে/এএস/মে ২১, ২০২৫)