কাশিয়ানীতে কাবিখা প্রকল্পে করা ৫০ বছরের পুরনো রাস্তা দখল করে লাগানো হলো কলাগাছ

রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ৫০ বছরের পুরোনো একটি রাস্তা জোরপূর্বক দখল করে কলাগাছ লাগিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে সাধারণের চলাচলের বিঘ্ন ঘটা সহ সম্পুর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি হতদরিদ্র কৃষক পরিবার। বেশ কিছু কৃষকের ফসল আনা নেওয়ার একমাত্র পথটিও এখন বদ্ধ হওয়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে।
অভিযোগের পর সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের দস্তর পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. কুদ্দুস শেখের বাড়িতে যাওয়ার একমাত্র রাস্তা কেটে সেখানে কলাগাছ লাগিয়ে দেন একই গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ শেখের চার ছেলে—শামসু শেখ (৭০), ছিরু শেখ (৬৮), আফতাব শেখ (৬০) ও রেজাউল শেখ (৫২)।
গত ১৬ মে তারিখ (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের পর বৃষ্টির ভিতরে তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা দখল করেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
এ ঘটনায় কুদ্দুস শেখ ও তার পরিবার বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও এখনো কোনো সুরাহা পাননি। রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারটি চরম বিপাকে পড়েছেন, বন্ধ হয়ে গেছে যাতায়াতের একমাত্র পথ। কুদ্দুস শেখের দুই ছেলে পেশায় ভ্যানচালক হওয়ায় এবং রাস্তা বন্ধ থাকায় তারা ভ্যান নিয়ে বাড়িতে এখন বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. কুদ্দুস শেখ বলেন, 'আমাদের পূর্বপুরুষদের আমল থেকেই এই রাস্তা দিয়ে আমরা চলাচল করি। এটি আমার নিজস্ব জমির ওপর করা একটি রাস্তা, যা সরকারি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে টিআর/কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাটি ফেলে উন্নয়ন করা হয়েছিলো। এখন শুধু আমরা নই, আশপাশের কৃষকরাও এই রাস্তা দিয়ে ফসল আনা-নেওয়া করেন। একাধিক বার শালিস করে আমরা রায় পেয়েছি। এর পরেও তারা এ বিষয়টা নিয়েই আমাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। আমরা চাই এ মামলা থেকে আমাদের অব্যাহতি দিক। আমি চাই প্রশাসন জমির বিষয়টি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিক।'
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'ওই জমির উত্তর পাশে আমরা খেয়ে আসছিলাম। দক্ষিণ পাশে কুদ্দুসরা ভোগদখল করেছিল। আমরা বাড়ি না থাকার কারণে তারা রাস্তা তৈরী করে নিয়েছে। এখন আমরা সেটা কেটে ফেলেছি। এতোদিন পরে কাটলেন কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার ভাই আফতাবকে ওরা মাঠে পেয়ে মেরেছে। এ জন্য ওদেরকে আমাদের জমি দিয়ে হাটতে দিবোনা। ও যা পরে করুক।'
আজ শনিবার (২৪ মে) এ বিষয়ে কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরজানা জান্নাত বলেন, 'আমার কাছে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। যেহেতু এটি টিআর/কাবিখা প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকৃত রাস্তা, তাই কেউ জোরপূর্বক তা বন্ধ করতে পারে না। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবো।'
এদিকে, রাস্তাটিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। অতিদ্রুত এর সমাধান না হলে যে কোনো সময়ে বড় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
(আরআর/এসপি/মে ২৪, ২০২৫)