আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের চেষ্টা

আল-আমিন মিয়া, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের পারের টং গ্রামে এক বয়োবৃদ্ধ বিধবা মহিলার ৮০ শতাংশ জমি দীর্ঘদিন যাবত জবর দখল করে রেখেছে স্থানীয় একটি ভূমিখেকো চক্র এমন অভিযোগ করেছেন ওই মহিলার পুত্র মো. মুসাহিদ আহমদ। এমনকি মৌলভীবাজারের সহকারী জজ, শ্রীমঙ্গল আদালতে মামলা দায়ের হলে আদালতের নির্দেশে এডভোকেট কমিশন কর্তৃক সরজমিনে পরিদর্শনপূর্বক লিখিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপনের পর আদালত কর্তৃক জবর দখলকারীদের প্রতি কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হবে না এ মর্মে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে আদালতে দাখিলের নির্দেশ প্রদান করলেও দখলকারীরা এখনো ওই জমিতে চাষাবাদের চেষ্টায় লিপ্ত এবং জমিতে গেলে বয়োবৃদ্ধ বিধবা মহিলা ও তার পরিবারের জান-মালের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দিচ্ছে বিবাদীরা এমন অভিযোগ তার।
মো. মুসাহিদ আহমদ কান্না জড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করে জানান, আশীদ্রোন ইউনিয়নের পরের টং গ্রামের মোহাম্মদ আব্দুর রেজ্জাক গংদের নিকট থেকে ১৯৯৫ সালের ৯ নভেম্বর ওই ইউনিয়নের পারের টং মৌজার ৭০৪, ৭০৭, ৭০৬, ৫৭০ ও ৭০৫ নম্বর দাগে মোট ৮০ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তার তিন মামা উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের ষাড়েরগজ গ্রামের মোহাম্মদ আজাদ মিয়া, মোহাম্মদ লুৎফুর ও মোহাম্মদ আক্কাস মিয়া। কিছুদিন তারা ভোগ দখলের পর ওই জমি তাদের বোন মোছা. জায়দা বেগমের নামে ইসলামি শরিয়ত মতে হেবা ঘোষণা করে দখল সমজিয়ে দেন।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর শ্রীমঙ্গল সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে সমূদয় জমির দলিল সম্পাদন করা হয়। দলিল সম্পাদনের পর যথানিয়মে মোছা. জায়দা বেগমের নামে নামজারী, খাজনা, ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করা হচ্ছে। এর কয়েক বছর পর আকষ্মিক পাশের বাড়ির বশির মিয়া, তার ভাই কবির মিয়াগং ওই জমি জোরপূর্বক ওই জমির মধ্যে ৫৭০ নম্বর দাগের ১৫ শতাংশ জমি দখল করে নেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিচার-সালিশ হলেও কোন সমাধান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে বয়োবৃদ্ধ মোছা. জায়দা বেগম সম্প্রতি সহকারী জজ আদালত, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারে মোকদ্দমা দায়ের করেন।
মোকদ্দমা দায়েরের পর আদালতের নির্দেশে বয়োবৃদ্ধ মোছা. জায়দা বেগমের আইনজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন ও বিবাদী তথা বশির মিয়া গংদের আইনজীবী তপন কান্তি দে এডভোকেট কমিশনার হিসেবে গত ৬ মে সরজমিনে পরিদর্শন করে ১৪ মে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। এর প্রেক্ষিতে ১৮ মে সহকারী জজ আদালত, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার বাদীনি মোছা. জায়দা বেগমের প্রার্থীতমতে বিবাদীপক্ষের প্রতি কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হবে না এ মর্মে ১৫ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে আদালতে দাখিলের আদেশ প্রদান করেন।
শনিবার সরজমিনে পারের টং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিবাদীপক্ষ তথা বশির আহমদ, তার ভাই কবির আহমদ, ছেলে মারুফ আহমদ, বশির আহমদের স্ত্রী নাজমা বেগমসহ কয়েকজন বিরোধীয় ওই জমিতে কাজ করছেন। এ সময় তারা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে জমিটুকু তাদের বলে দাবি করেন।
এ ব্যাপারে মো. বশির আহমদ বলেন, আমি ৬০ বছর যাবত সরকারি জমি ভোগ দখল করে খাইতেছি, এখন জায়দা বেগমের সন্তানরা দাবী করে এই জায়গার কাগজ তাদের কাছে আছে। এটা ওয়ান বাই ওয়ান সরকারি খতিয়ানের জায়গা, তারা এই জায়গা কিভাবে নামজারি করলো? কিভাবে দলিল বানাইলো আমার জানা নাই। তারা জোড় জবরদস্তী করে আমাকে আক্রমণ করে দখল করতে চায়। আমি আইনের সহায়তা চাই। আমি আদালতে আবদার করেছি সরকারের কাছে, বন্দোবস্ত কিভাবে সরকার আমাকে দিবো৷ আদালত থেকে আমার পক্ষে একটি নোটিশ পাঠানো হয় তাদের কাছে। তারা আমার জমিতে ঢুকে জমির ফসলাদি নষ্ট করে জোরপূর্বক দখল করতে চায়।
জমির মালিক মোছা. জায়দা বেগমের ছেলে মোসাহিদ আহমেদ বলেন, আমাদের জায়গার নামজারি, রেজিস্ট্রারি আছে এর পরেও অন্যায়ভাবে বশির মিয়া আমার জায়গা দখল করে রেখেছে। বশির মিয়া মাদক ও চোরাকারবার সহ অবৈধ বালু ব্যবসার সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ জড়িত। সে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগের ছত্রছায়ায় বিগত দিনে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত ছিলো। আমরা আমাদের জমিতে যেতে পারিনা, সে ঝগড়াঝাঁটির জন্য মহিলা লাগিয়ে দেয়। কোন রাস্তা না পেয়ে অসহায় হয়ে আমরা আদালতে মামলা দেই ও সকল কাগজপত্র আদালতে উপস্থাপন করি। আদালত জায়গায় প্রকৃত মালিক আমরা বলে নোটিশ প্রদান করেন৷ নোটিশ করার পরেও সে জোরপূর্বক জায়গাটি দখল করে আছে।
(এএ/এসপি/মে ২৬, ২০২৫)