জয় হরিবল ও জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বনিতে মুখরিত
রাজৈরের শতবছরের ঐহিত্যবাহী কুম্ভমেলা, অংশ নিচ্ছেন নেপাল, ভারত, শ্রীলংকা ও ভুটানের সাধুরাও

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর রাজৈরের কদমবাড়ীতে ৪ দিন ব্যাপী ‘কুম্ভমেলা’ বা কামনার মেলা শুরু হয়েছে। মহামানব গণেশ পাগলের এ মেলায় ভক্তরা আসেন পূণ্য অর্জনের জন্য। মেলায় অংশ নিচ্ছেন নেপাল, ভারত, শ্রীলংকা ও ভুটানের সাধুরাও। ধারণা করা হয় প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় ১৫ লাখের মতো ভক্তদের আগমন ঘটবে। তাই মেলাকে ঘিরে রয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা। এছাড়াও মেলাকে ঘিরে পুরো মাঠ জুড়ে বসেছে সারি সারি দোকান। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পছন্দের সব জিনিসপত্র।
আজ বুধবার সকাল থেকে মেলা শুরু হয়ে আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে। এর আগে মঙ্গলবার (২৭ মে) রাত থেকেই দলে দলে জয় ডংকা ও নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জয় হরিবল ও জয়বাবা গণেশ পাগল ধ্বণি করতে করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধু সন্যাসী ও ভক্তবৃন্দরা বাসে, ট্রাকে, ট্রলারে ও পদব্রজে মেলা প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শত বছর ধরে মাদারীপুর রাজৈরের কদবাড়ির দিঘীরপাড় এলাকার মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই কুম্ভ মেলাকে অনেকেই কামনার মেলাও বলে থাকেন। হিন্দু ধর্মাম্বলীদের শাস্ত্রমতে সত্য যুগে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে সমুদ্র মন্থনে যে অমৃত সুধা উঠেছিল তা চারটি কুম্ভ পাত্রে হরিদ্বার, প্রয়াগ, উজ্জয়িনী ও নাসিক এ চারটি স্থানে রাখা হয়েছিল। এ ঘটনার পর থেকে ভারতীয় মুনি ঋষিরা কুম্ভ মেলার আয়োজন করে আসছেন।
শত বছর আগে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৩ তারিখে ১৩ জন সাধু ১৩ সের চাল ও ১৩ টাকা নিয়ে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ীর দীঘিরপাড় এলাকায় ভারতের কুম্ভমেলাকে অনুসরণ করে এ মেলার আয়োজন করেন। সেই থেকে এখানে মহামানব শ্রী শ্রী গণেশ পাগল সেবাশ্রমে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মূল মেলা হয় এক রাতের জন্য। তবে এই মেলা চার দিন চলবে। কখনও কখনও সপ্তাহ ব্যাপীও হয়ে থাকে। এখানে বিভিন্ন দেবদেবতার ১০৮টি মন্দির রয়েছে। আয়োজকরা ধারণা করছেন প্রতিবছরের মতো এবারও ১৫ লক্ষাধিক ভক্তবৃন্দের উপস্থিতি ঘটেবে।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, খুলনা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, বগুড়া, চিটাগং, রংপুর, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, নারায়নগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গৌরনদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে মানুষ আসেন। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভুটান থেকেও বহু ভক্তবৃন্দ আসেন ঐতিহ্যবাহী এই কুম্ভ মেলায়। এ মেলায় আসা হাজার হাজার সাধু সন্ন্যাসী ও আর ভক্তরা একতারা আর দোতারায় সুর দিয়ে সারা রাত মেতে থাকেন। আয়োজন করা হয় ছোট বড় অর্ধশতাধিক প্যান্ডেলে বাউল ও ধর্মীয় সঙ্গীতানুষ্ঠানের। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ভক্তদের মধ্যে ভক্তসেবা কমিটির প্রসাদ বিতরণ।
এছাড়াও মেলা উপলক্ষে প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসেছে সারি সারি নানা রকমের দোকান। এ মেলা উপলক্ষে ৭ দিন আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসে দোকানিরা। বাঁশ বেতের শিল্প কারুকাজ খচিত গৃহস্থালী মালামাল, মৃৎ শিল্প বা মাটির তৈরী তৈজসপত্র, বাহারী মিষ্টি, দৃষ্টি আকর্ষনীয় খেলনা ও বাহারী প্রসাধণী পণ্য দিয়ে সাজিয়ে ছোট বড় ২ সহস্রাধিক বিভিন্ন ধরণের স্টল বসেছে।
মেলায় ঘুরতে আসে দর্শনার্থী প্রীতম ঘোষ বলেন, আমি শরীয়তপুর থেকে এসেছি। আমি প্রতিবছরই আসি। এখানে এসে পূজা আর্চনা করি এবং ঘুরে ঘুরে সব দেখি। আমার খুব ভালো লাগে।
খুলনা থেকে আসা প্রদীপ সাহা বলেন, পরিবারকে সাথে নিয়ে কুম্ভুমেলায় ঘুরতে আসি। এটি আমাদের কাছে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মেলা বলে মনে করি। তাছাড়া গনেশ পাগলের কাছে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়। তাই এখানে এসেছি।
ব্যবসায়ী মনোষ সাহা বলেন, প্রতিবছরই এই কুম্ভুমেলায় দোকান নিয়ে আসি। আমার প্রসাধনী ও কসমেটিক্সের দোকান। মেলায় বেচা-কেনা অনেক ভালো হয়। লাভও ভালো হয়।
গনেশ পাগল সেবাশ্রম ও মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নীল রতন সরকার বলেন, ধারণা করা হয় এবারও মেলায় ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের আগমন হবে। আবহাওয়া ও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় আগেভাগেও চলে এসেছেন অনেক ভক্তবৃন্দ। তাছাড়া এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে মেলা শেষ করতে সবাই আন্তরিক আছেন। আশা করছি সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে মেলা শেষ হবে।
রাজৈর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় কুমার ঘোষ বলেন, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশনায় মেলার চারদিকে পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছেন। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। প্রায় ২শ’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছেন। উৎসব ও শান্তিপূর্ণ করতে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া একটি কন্টোল রুম খোলা হয়েছে ও টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যা থেকে মেলার মাঠ সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
(এএসএ/এসপি/মে ২৮, ২০২৫)