প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে নীলফামারীতে সচেতনতামূলক মানববন্ধন

ওয়াজেদুর রহমান কনক, নীলফামারী : বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ প্রভাবের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নীলফামারীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর উদ্যোগে গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)-এর আয়োজন ও নেতৃত্বে আজ রবিবার সকালে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এ মানববন্ধন হয়।
ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে অংশ নেন সনাক, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এন্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপ, একটিভ সিটিজেন্স গ্রুপ (এসিজি)-এর সদস্যবৃন্দ, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, পরিবেশবাদী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
সনাক সভাপতি মো. আকতারুল আলম মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে আমাদের এই উদ্যোগ শুধু একদিনের কর্মসূচি নয়; এটি একটি ধারাবাহিক আন্দোলন। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ ও নাগরিক সচেতনতার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।”
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ইউএসএস-এর প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সালমা আক্তার ও প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ মো. আব্দুর রউফ, ডেমোক্রেসি ওয়াচ-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নাদিয়া আক্তার, ওয়ার্ল্ড ভিশনের প্রোগ্রাম অফিসার প্রশান্ত বসকে, নীলফামারী জেলা পরিবেশ দূষণ ও সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি এবং দীপ্তমান যুব সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুল মমিন, সনাক সদস্য মো. মিজানুর রহমান লিটু, এসিজি সহ-সমন্বয়ক রুবি বানু ও ইয়েস সহ-দলনেতা কুমারী বৃষ্টি রানী রায়সহ অনেকে।
বক্তারা বলেন, “প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্য, জলজ প্রাণী ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এখনই এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে হবে।”
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ‘প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সকলে, একসাথে, এখনই’, ‘প্লাস্টিক দূষণ রোধের সময় এখনই’ ইত্যাদি স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। কর্মসূচির সমাপ্তিতে সনাক—টিআইবি প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সরকারের কাছে ১৪ দফা সুপারিশ তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো তুলে ধরা হলো।
১. প্লাস্টিক দূষণ রোধে বৈশ্বিক চুক্তি দ্রুত সম্পাদনের আহ্বান।
২. ২০৪০ সালের মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ এবং উৎপাদিত প্লাস্টিক বর্জ্যের পূর্ণ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ।
৩. প্লাস্টিক উৎপাদন থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসের হিসাব স্বচ্ছভাবে প্রকাশ এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা সংশোধন।
৪. দূষণকারীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নীতির (Polluter-pays principle) বাস্তবায়ন।
৫. ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি।
৬. “ন্যাশনাল থ্রিআর স্ট্রাটেজি ফর ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট” হালনাগাদ ও আধুনিকীকরণ।
৭. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি।
৮. সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণে সচেতনতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।
৯. প্লাস্টিক শিল্পে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি এবং পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণে প্রণোদনা।
১০. অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে দূষণ হ্রাসের পদক্ষেপ।
১১. একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদকদের দায়িত্ব সম্পর্কে প্রচারণা বৃদ্ধি।
১২. প্লাস্টিক দূষণের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
১৩. নদী ও জলাশয় থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে নাগরিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করা।
১৪. ২০২৫ সালের মধ্যে এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকর ঘোষণা ও পদক্ষেপ গ্রহণ।
এই কর্মসূচির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা বলেন, “পরিবেশের সুরক্ষায় আমাদের সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই সময় একসাথে কাজ করার।”
(ওআরকে/এসপি/জুন ০১, ২০২৫)