চাটমোহর প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহরে পাঁচ মাস বয়সী শিশু সোহাগী মন্ডল হত্যাকান্ডের একদিনের মাথায় রহস্য উদঘাটন করল পুলিশ। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শিশুটির মা শ্রাবন্তী মন্ডলকে আজ রবিবার সকালে গুনাইগাছা মন্ডলপাড়া গ্রামে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করেছে পুলিশ। 

আটক শ্রাবন্তী মন্ডল উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের জালেশ্বর গ্রামের দিনমজুর কমল মন্ডলের স্ত্রী ও নিহত শিশু সোহাগীর মা।

জানা যায়, শ্রাবন্তী তার শিশু কন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় শনিবার ভোরে বাড়ির পাশের নদীতে ফেলে দেয়। এসময় বাড়িতে কেউ ছিলো। পরে ঘুমন্ত শিশুকে পাওয়া যাচ্ছেনা বলে চিৎকার কান্নাকাটি করলে স্বজনসহ প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। এসময় শ্রাবন্তীও সকলের সাথে খোঁজাখুজির বাহনা করে মৃতদেহ বড়াল নদের পার থেকে উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে রাতেই আটক করা হয় শিশুটির মাকে। শ্রাবন্তী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজ শিশুকন্যা হত্যার দায় স্বীকার করেন।

এর আগে শনিবার সকাল ৯টায় বাড়ির অদূরে বড়াল নদের পার থেকে সোহাগী নামের ওই শিশুর উদ্ধার হওয়া লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মর্গে পাঠায়।

এরপর শ্রাবন্তী মন্ডল নিজে বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করতে বার বার ইচ্ছা পোষণ করেন। এতে পুলিশের সন্দেহ হলে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এক পর্যায়ে শিশুর মা শ্রাবন্তী মন্ডল নিজের শিশু সন্তানকে হত্যার দায় স্বীকার করেন।

শনিবার রাতে শিশুটির পিতা কমল মন্ডল বাদি হয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে সন্তান হত্যার একটি মামলা দায়ের করেন।

রবিবার পাবনা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন শ্রাবন্তী মন্ডল। রোববার বিকেলে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

নিহত সোহাগীর বাবা কমল মন্ডল জানান, সকাল ছয়টার দিকে তার স্ত্রী শ্রাবন্তী মন্ডল তাকে বলে, সোহাগীকে বারান্দার বিছানায় ঘুমিয়ে রেখে বাইরে গরুর খাবার খড় আনতে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখেন মেয়ে তার বিছানায় নেই। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির অদূরে বড়াল নদের কিনারায় শিশুটির মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।

এদিকে সহকারি পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) আরজুমা আক্তারের নের্তৃতে পুলিশের একটি টিম ঘটনার ক্লু উদ্ধারে মাঠে নামে। তারা নানা দিক তদন্ত করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে শিশুর মা শ্রাবন্তী মন্ডলকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শ্রাবন্তী পুলিশের কাছে স্বীকার করেন সে তার শিশু কন্যাকে ঘুমন্ত অবস্থায় শনিবার ভোরে বাড়ির পাশের নদীতে ফেলে দেয়। পরে খোঁজাখুজির বাহনা করে মৃতদেহ উদ্ধার করে। তবে কেন বা কী কারণে শিশুটিকে তার মা হত্যা করেছে তার বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান, আটককৃত শ্রাবন্তী প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। বিষয়টি প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান ওসি।

(এসএইচ/এসপি/জুন ০১, ২০২৫)