ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : সরকারিভাবে বিভিন্ন মৌসুমে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের অভিযানের লক্ষ্যমাত্রা দীর্ঘ আট বছর পূরণ হয়নি। সরকার লাভজনক দাম নির্ধারণ এবং মিলাররা শতকরা ২ ভাগ ইনসেনটিভ বোনানের আশায় মেয়াদ শেষের অনেক আগেই চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে যাচ্ছে। ঈশ্বরদী এলএসডি-১, সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা মো. তারেক-উজ-জামান ও মুলাডুলি সিএসডির সংরণ ও চলাচল কর্মকর্তা মামুন এ কাইয়ুম এমনটাই আশা পোষণ করছেন।

ইতোমধ্যেই মুলাডুলি গোডাউনে লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ ভাগ ও ঈশ্বরদী গোডাউনে ৭০ ভাগ অর্জন হয়েছে বলে বুধবার এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও মিল মালিক সমিতির নেতারা নিশ্চিত করেছেন।

ঈশ্বরদীর দুটি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মিল মালিকরা আন্তরিকতার সাথে সহযোগিতা করছেন বলে দাবি করেছেন, উপজেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. দুলাল মন্ডল এবং বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পাবনা জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলাল।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল হতে অনানুষ্ঠানিকভাবে বোরো মৌসুমের সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এ মৌসুমে ঈশ্বরদীর মোট ৯৮টি মিলের মালিক চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এরমধ্যে ৮২টি হাসকিং ও ১৬টি অটো রাইস মিলস। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯৮ মেট্রিক টন, গম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অনির্ধারিত এবং চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার ১০০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়। সরকারিভাবে প্রতি কেজি ধানের দাম ৩৬ টাকা, গমের কেজি ৩৬ টাকা ও চালের দাম ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী এলএসডির সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা মো. তারেক-উজ-জামান বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে গোডাউনে চাল সংগ্রহে ঈশ্বরদীর মিলাররা খুবই আন্তরিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। সংগ্রহের জন্য লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০ হাজার ৫০ মেট্রিক টন। সংগ্রহের মেয়াদ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে মাত্র জুনের ৩ তারিখ পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭০ শতাংশ।

মুলাডুলি সিএসডির ম্যানেজার মামুন এ কাইয়ুম স্বতঃফুর্তভাবে গোডাউনে চাল সরবরাহ করছেন জানিয়ে বলেন, চুক্তিবদ্ধ মিলাররা যেন কোনোরূপ হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়াই গোডাউনে চাল সরবরাহ করতে পারেন, সেদিকে জোড়ালোভাবে দৃষ্টি রাখা হয়েছে। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৫০ মেট্রিক টন। বুধবার (৪ জুন) পর্যন্ত গোডাউনে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই অর্জিত হচ্ছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উপজেলা হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. দুলাল মন্ডল বলেন, সরকারি গোডাউনে চাল দিয়ে গত বছর ৩৩ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। লাইসেন্স রক্ষা করতে লোকসান দিয়েই বিগত ৮ বছর গোডাউনে চাল সরবরাহ করেছি। লোকসানের কারনে অনেকে চাল সরবরাহ করেনি। একারণে তাদের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। এবারে বাজার দরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি নির্ধারণ করায় মিলারদের বেশী লাভ না হলেও লোকসান গুনতে হবে না। তাই মিলাররা স্বতঃফূর্তভাবে চাল সরবরাহ করছেন।

বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস অনার্স অ্যাসোসিয়েশন পাবনা শাখার সভাপতি ও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির দুলাল বলেন, বিগত সময়ে লাইসেন্স রার্থে গোডাউনে চাল সরবরাহ করেছি। আমার ১২ লাখ টাকা লোকসান ও বিডি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এবারে দাম কিছুটা ভালো দেওয়ায় আমরা চাল সংগ্রহ অভিযান সফল করতে কাজ করছি। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। লাভ খুব একটা হবে না। যাতে লোকসান না হয় এজন্য সরকারের কাছে ২ শতাংশ ইনসেনটিভ বোনাসের আবেদন করা হয়েছে। বোনাস পেলে মিলারদের লোকসান পুষিয়ে যাবে। আশা করি সরকার মিলারদের বোনাস প্রদানের বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করবে।

(এসকেকে/এসপি/জুন ০৪, ২০২৫)