ঈশ্বরদী প্রতিনিধি : ঈশ্বরদীতে কোরবানীর মাংস বিক্রির ধুম পড়েছে। ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বিক্রেতাদের সামনে। উপজেলার রেলগেট, ফকিরের বটতলা, চাঁদআলীর মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে গভীর রাত পর্যন্ত মাংস বিক্রির এই চিত্র দেখা যায়। কোরবানির মাংস গ্রহণ করার পর অনেক দরিদ্র মানুষ তা নিজেদের জন্য কিছু রেখে বিক্রি করে নগদ টাকা উপার্জন করছেন।

ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকায় গরিবদের দেওয়া এ মাংস শহরের রেলেগেটে গভীর রাত পর্যন্ত অস্থায়ী মাংসের হাট থেকে কিনছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। কোরবানির গরু, ছাগল, ভেড়া জবাইয়ের পর পাড়া-মহল্লায় অনেক দরিদ্র, অসহায় মানুষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহ করে নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ রেখে বাকীটা বিক্রি করে নগদ টাকার প্রয়োজন মেটান নিম্ন আয়ের মানুষ।

শনিবার (৭ জুন) রাতে সরেজমিনে ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকায় রেললাইনের ওপরে দেখা যায়, পলিথিন বা প্লাস্টিকের ব্যাগে এবং পলিথিন বিছিয়ে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির মাংস। নিজে কোরবানি দিয়ে কেউ এ মাংস বিক্রি করছেন না। দানের অংশ হিসেবে পাওয়া মাংস যারা সংরক্ষণ করতে পারেন না, তারা বিক্রি করে দিচ্ছেন। যাদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই অথবা বাজার থেকে বেশি দামে মাংস কিনে খেতে পারেন না তারাই এ মাংসের ক্রেতা। এছাড়াও ছোট-খাট খাবার হোটেলের মালিকদের এই মাংস কিনতে দেখা গেছে। কম দামের সুযোগ নিয়ে এই মাংস তারা সংগ্রহ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করেন, যা পরবর্তীতে হোটেলের রান্নায় ব্যবহার করা হবে বলে জানা যায়।

মাংস বিক্রির জন্য এসব অস্থায়ী দোকানে কসাই, গরু কাটার শ্রমিক এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস সংগ্রহকারী নারী-পুরুষরা মাংস বিক্রি করছেন। এরইমধ্যে জুটছে কিছু ফড়িয়া। তারা দরিদ্রদের কাছ থেকে কম দামে মাংস কিনে তুলনামূলক বেশি দামে তা বিক্রি করছেন।

মানভেদে দাম পরিবর্তিত হচ্ছে। হাড়ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। সাধারণ মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। গরুর মাথা ও পায়ের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। আর গরুর ভুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে।

ভিক্ষুক জোমেলা বেগম বলেন, সারাদিনে ৬ কেজির মতো মাংস সংগ্রহ করেছি। এতো মাংস রাখবো কোথায়? খাওয়ার জন্য দুই কেজি রেখে বাকি চার কেজি বিক্রি করতে এসেছি। ৫০০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত দরদাম হচ্ছে।’

মাংস কিনতে আসা রিকশাচালক আয়নাল হোসেন বলেন, ‘দোকান থেকে গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে কিনতে হয়। এখানে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে কেনা যায়। তাই ২-৩ কেজি কেনার জন্য এসেছি।’

ফতেমোহাম্মদপুরের মৌসুমি কসাই নিজাম পাঁচ কেজি মাংস পেয়েছেন। বাসায় ফ্রিজ নেই। ৪ জনের সংসারে দুই কেজি মাংসই যথেষ্ট। বাকি তিন কেজি বিক্রি করতে এসেছেন। মাংস বিক্রির টাকা সংসারের অন্য কাজে লাগাবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহান রহমান জানান, বিগত পাঁচ বছর ধরে এখানে ঈদের দিন বিকেলে কোরবানির সংগ্রহ করা মাংস বিক্রি হচ্ছে। মাংসের ক্রেতা-বিক্রেতা দু’পক্ষই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। মাংস বেচাকেনা করে উভয়েই উপকৃত হয়।

(এসবেকে/এসপি/জুন ০৮, ২০২৫)