বিকাশ স্বর্ণকার, বগুড়া : বেড়াই যদি ক্ষেত খায় তাহলে জমির ক্ষেত কি রক্ষা পাই। এমন ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বগুড়া সোনাতলা পৌর শহরে সোনাতলা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাইট গার্ড মোনারুল ইসলাম মোনাই। ঈদ উৎসবে লোকজন যখন পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে ব্যস্ত ঠিক এমন সময় বেছে নেয় নাইট গার্ড মোনাই। 

গত (১০ জুন) মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১.৩০মিনিটে ভ্যান ভর্তি ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক স্কুল থেকে বিক্রি করে। তবে বিধি বাম রেলগেট যাওয়া মাত্রই স্থানীয় জনতা বইগুলোসহ ভ্যান ধরে ফেলে এবং একপর্যায়ে স্কুলের সামনে আনা হয়। সংবাদ পেয়ে ছুটে আসেন স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক আঃ হাই, শিক্ষিকা সুইটি ও শিক্ষাবিদ রুহুল আমিন রঞ্জু। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভ্যান চালক মোনাই এর কথা বলে দেয় এবং তাৎক্ষণিক ভ্যান ভর্তি বই থানা হেফাজতে নেয়া হয়।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে নাইট গার্ড মোনাই চাকরিতে যোগদানের পর থেকে একের পর এক কুকর্ম ঘটিয়েছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাঈদ মোঃ মোনারুল ইসলাম বলেন,ওইদিন গভীর রাতে মোনাই যে বইগুলো চুরি করেছিল সেগুলো শিক্ষা অফিসের।২০১৭ সালে নিয়োগের পর থেকে মোনাই বিভিন্ন সময়ে স্কুলের ৩০টির মতো সেলিং ফ্যান বিক্রি করে এবং স্কুলের তালাবদ্ধ ঘরে কৌশলে তালা খুলে আলমারি ভেঙে ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায়কৃত বিভিন্ন ফি'র রাখা ২৮হাজার টাকা চুরি করে এর বেশ কিছুদিন পর একই কায়দায় ১৭হাজার টাকা চুরি করে। মোনাই আমাদের অজান্তে একটি স্টিলের আলমারি রাতের আঁধারে বিক্রি করে এছাড়াও স্কুলের ঘন্টা পর্যন্ত সে বিক্রি করে। তবে এ সব বিষয় নিয়ে স্কুলের পক্ষে থেকে তাকে একাধিকবার লিখিত ভাবে শো-কোজ করা হয় এবং একবার এক চুরির ঘটনায় ৩হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছিল।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আর ক্ষমা না, এবার আমি বাদি হয়ে বই চুরির ঘটনায় মোনাই কে আসামি করে থানায় মামলা করবো।বিশিষ্ট সমাজ সেবক শিক্ষাবিদ রুহুল আমিন রঞ্জু বলেন, ওই রাতে স্কুল থেকে ৭বস্তা বই সহ ভ্যান আটক করা হয় পরে ভ্যান চালক জানাই ২০টাকা কেজি দরে মোনাই এর কাছ থেকে বইগুলো কিনেছিলাম।বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আঃ হাই বলেন,পারের দিন স্কুলে গিয়ে দেখি বই রাখার রুমের জানালা ভেঙ্গে মোনাই বইগুলো বের করে গভীর রাতে বিক্রি করেছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নাইট গার্ড মোনাই আওয়ামী লীগ নেতা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এর খুব কাছের লোক হওয়ার কারণে ওই বিদ্যালয়ে চাকরি হয় তার। ফলে নানা ধরনের কু-কর্ম করলেও পার পেয়ে যান।এ বিষয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মিলাদুন-নবী বলেন, ৬বস্তা বই সহ একটি ভ্যান গাড়ি থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি দিয়ে যায়। তবে এখন পর্যন্ত লিখিত ভাবে কোন অভিযোগ কেউ দেয়নি।বই চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ নাজমুল ইসলাম বলেন,ঈদের ছুটির পর অফিসে এসে জেলা শিক্ষা স্যারের সাথে কথা বললে তিনি মামলার পরামর্শ দিয়েছেন। কতগুলো বই ছিল এবং কতগুলো বই চুরি হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ২০২৫ সালের ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের ৫০থেকে ১৫০সেট পর্যন্ত বই ছিল সেখানে তবে কতগুলো বই চুরি করে মোনাই বিক্রি করেছে না দেখলে বলা সম্ভব নয়।

(বিএস/এএস/জুন ১৬, ২০২৫)