রিয়াজুল রিয়াজ, বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুরের মধুখালি উপজেলার রায়পুর ইউনিয়ন এর মাঝকান্দি গ্রামে তেরো বছরের কিশোরীকে অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আপন খান (১৬) নামক এক কিশোরের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) দিবাগত রাত ২টার দিকে মাঝকান্দি গ্রামে এমন ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আপন খান স্থানীয় বহরপুরের মো. ফারুক খান এর ছেলে বলে জানা গেছে।

বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে ফরিদপুর মধুখালি সার্কেল এর দায়িত্ব থাকা সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ইমরুল হাসান ও মধুখালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম নুরুজ্জামান সহ মধুখালি থানার একটি পুলিশ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে তারা ধর্ষণের শিকার কিশোরী(১৩) ও ধর্ষক আপন খান (১৬)কে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের মধুখালি থানায় নিয়ে যান।

এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেন মধুখালি সার্কেলের এএসপি মো. ইমরুল হাসান। তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের ঘটনাস্থল থেকে বের করে দেন, কারো সাথে এই ব্যাপারে কথাবার্তা বলতেও বাধা দেন। তবে এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানার আগে ভুক্তভোগীর আত্মীয় মনে করে পুলিশ কর্মকর্তা ইমরুল হাসান জানান, 'এ ধরণের অপরাধের সাথে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। তাছাড়া অপরাধী ছাড় পেয়ে গেলে উৎসাহিত হবে এবং একই অপরাধ বারবার করতে থাকবে।'

এ বিষয়ে ফরিদপুর মধুখালি থানার ওসি এস এম নুরুজ্জামান ঘটনাস্থল থেকে কোনো প্রকার বক্তব্য না দিলেও পরে তিনি জানান, ভুক্তভোগী কিশোরী (১৩)কে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হবে। এছাড়া কিশোরীর প্রাথমিক জবানবন্দি অনুসারে ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আপন খান (১৬)কে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।'

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কিশোরীর প্রবাসী বাবার পাঠানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ঘটনার পর আপন খান (১৬)কে একটি ঘরে বসিয়ে কোনো এক ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার বর্ণনা শুনছেন। এসময় আপন খান শিকার করেন যে, ভুক্তভোগী কিশোরীকে বাসা থেকে বের করে নিয়ে এসে আরেকটি রুমে ঢুকিয়ে তারা প্রায় একঘন্টা সময় কাটান। জনৈক ওই ব্যক্তির এক প্রশ্নের জবাবে আপন খান (১৬) জানান, 'এমনিই ওর দেখা করতে গিয়েছিলাম।' জনৈক ব্যক্তি তখন আপনকে জিজ্ঞেস করেন, 'কেনো রাত দুইটার সময় কিশোরীকে বের করে এনে আরেকটি রুমে ঢুকিয়ে এক ঘন্টা রুম আটকে রেখে গল্প করতে হলো তোকে, কি কি করেছিস রুমের ভিতর মেয়েটির সাথে, গল্প করার জন্য কি তোর দিনের বেলা ছিলোনা।' তার ওসব প্রশ্নের জবাবে কোনো প্রকার উত্তর দিতে পারেননি অভিযুক্ত কিশোর আপন খান। এসময় আপন খানকে তার হাতে থাকা মোবাইল টিপতে দেখা যায়।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভুক্তভোগী কিশোরী ও আপন খানকে মাঝে মাঝে রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখতেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে একটি ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো বটে, তবে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো কিনা তা কেউ হলফ করে বলতে পারেননি।

এদিকে, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। এমনকি ঘটনাস্থলে থেকে কোনো ছবি, ভিডিও, ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের সাথে কোনো প্রকার কথাবার্তা বলার সুযোগ ও এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে করতে দেননি মধুখালির সার্কেল এএসপি মো. ইমরুল হাসান। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে নিজেদের পুলিশিং কাজকর্ম শেষ করে পুলিশ পাহাড়ায় ভুক্তভোগী কিশোরী ও অভিযুক্ত আপন খানকে নিয়ে দুটি গাড়ীতে করে মধুখালি থানার দিকে চলে যান। এসময় ভুক্তভোগী কিশোরী ও অভিযুক্ত আপন খান দু'জনেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় পুলিশের অনুরোধে তাঁদের অবিভাবক শ্রেনীর কয়েকজন আত্মীয়কেও পুলিশের গাড়ীতে করে মধুখালি থানার উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে।

(আরআর/এএস/জুন ১৯, ২০২৫)