শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : ইরি-বোরো'র ভরা মৌসুমে ধানের জেলা  দিনাজপুরে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে জেলায় কেজিতে চালের দাম বেড়েছে  কেজিতে প্রকারভেদে  ৬ থেকে ৮ টাকা। আর ৫০ কেজির এক বস্তা চালে দাম বেড়েছে  ২৫০  থেকে ৩৫০ টাকা। প্রতি কেজি কাটারি চালের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা।

চাল বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। আর মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশির কারণে দাম বেড়েছে।

দিনাজপুরের বাহাদুর বাজার চালের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নাজিরশাইল চাল কেজিতে ৬৫ থেকে বেড়ে ৭৫ টাকা, বিআর-২৯ চাল ৪৮ থেকে বেড়ে ৫৪ টাকা, মিনিকেট ৫৮ থেকে বেড়ে ৬৪ টাকা, গুঁটি স্বর্ণা ৪৫
থেকে বেড়ে ৫২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫২ থেকে বেড়ে ৫৮ টাকা এবং দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি সুগন্ধি কাটারি ভোগ চাল কেজি প্রতি ৯০ টাকা বিক্রি হলেও এখন তা ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সোমবার (২৩ জুন) দিনাজপুরের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় পাইকারি চালের আড়ত বাহাদুরবাজারে গিয়ে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বর্তমানে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৭০০ টাকায়, যা দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৩ ২০০ টাকায়। একইভাবে দুই হাজার ৫৫০ টাকার বিআর উনত্রিশ দুই হাজার ৯০০, দুই হাজার ৭০০ টাকার আঠাশ তিন হাজার ২০০, দুই হাজার ৭০০ টাকার সুমন স্বর্ণা দুই হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সদ্য বাজারে উঠা শম্পা কাটারি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৪০০ টাকায়। আর একই জাতের পুরাতন চাল বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৮০০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৫০০ টাকা কমে বস্তা বিক্রি হয়েছিল। এটি পাইকারি হিসাব। পাইকারিতে বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ১০ টাকা।


দিনাজপুর বাহাদুর বাজার চালের আড়তদার আশরাফ আলী জানান, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বেশি দামে চাল কিনে আমাদের বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের বিক্রি কিছুটা কমেছে।

বাহাদুরবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা এরশাদ আলী বলেন, ‘কোরবানির কয়েকদিন পর থেকে প্রতি বস্তায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা। তারা বলছেন ধানের দাম বেশি, এজন্য চালের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে আমাদের বেশি দামে কিনে কিছুটা লাভ রেখে বিক্রি করতে হয়। সাধারণ মানুষকে বেশি দামে চাল কিনে খেতে হচ্ছে।

বাহাদুর বাজারে চাল ক্রেতা রাজেকুল ইসলাম বলেন, 'আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। একসঙ্গে অনেক চাল কিনে রাখা সম্ভব হয় না। ৩ থেকে ৫ কেজি করে চাল কিনি। কয়েকদিন থেকেই চালের বাজার বেড়েই চলছে। কিন্তু আমাদের আয় তো আর বাড়ছে না। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমারা নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা। '

তবে মিল মালিকরা বলছেন, ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ার কারণ তাদের বোধগম্য নয়। ধানের দাম অস্বাভাবিক হারে কেন বাড়ছে তা তারা বুঝতে পারছেন না। মিল মালিকরা মিল সচল রাখতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কিনছেন। পাশাপাশি চাল উৎপাদনের খরচ, কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংকের সুদ সব কিছুই হিসাবে রাখতে হয়। সব মিলে চালের দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ অটো-মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ‘ধানের দাম বাড়লে চালের দামও বাড়ে। ধানের দাম বাড়ুক এটা আমরা চাই, এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে দাম বেড়েছে এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না। কারণ অধিকাংশ কৃষকের ঘরে এখন ধান নেই। এক শ্রেণির অসাধু মজুতদার ধান কিনে এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে ধানের দাম বাড়ছে, সেইসঙ্গ বাড়ছে চালেরও। চালের দাম বাড়লে আমাদের দায়ী করা হয়। আমরা চাই এর জন্য অভিযান চালানো হোক। যারা অবৈধভাবে ধান মজুত করে মিলারদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। জেলায় ছোট-বড় অনেক মজুতদার রয়েছেন। তারা সবাই লাইসেন্সের আওতায় আসেনি। এসব মজুতদারই মূলত সিন্ডিকেট করে ধানের দাম বাড়াচ্ছেন। অবৈধ মজুতদারদের আইনের আওতায় আনলেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।'

প্রসঙ্গত, দিনাজপুর জেলায় প্রতি বছর চাল উৎপাদন হয় ১৪ লাখ মেট্রিক টন এবং এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।

(এসএএস/এএস/জুন ২৩, ২০২৫)