মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের রাজৈরে ইতালী প্রবাসী হালিম খানের (৪২) মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়েছে স্ত্রী রেশমা বেগমসহ (৩০) নিহতের শশুরবাড়ির লোকজন। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে নিহতের লাশ ময়না তদেন্তর জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের নগর গোয়ালদি গ্রামের মৃত হাজী বালা উদ্দিনের ছেলে ইতালি প্রবাসী হালিম খান। প্রবাসী হালিম খানের সাথে ২০১৮ সালে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক হয় পাশের দারাদিয়া গ্রামের ছোমেদ চোকিদারের মেয়ে রেশমা আক্তারের। এরপর ২০২১ সালের জানুয়ায়িতে তাদের দুজনের বিয়েও হয়। বিয়ের পর আবার ইতালি চলে যান হালিম। সেখানে গিয়ে স্ত্রী ও তার শশুরের নামে পর্যায়ক্রমে ৬০ লাখ টাকা পাঠান তিনি। সেই টাকা থেকে শ্যালক সবুজ চোকদার একটি মোটরসাইকেল কিনেন। তিন মাস আগে ৬ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন হালিম খান। পরে মোটরাসাইকেল কেনার টাকা ফেরত চায় তিনি। এছাড়াও বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাও চান। এ নিয়ে শুরু হয় শ^শুরবাড়ির লোকজনের সাথে বিরোধ।

সর্বশেষ সোমবার (২৩ জুন) রাতে বাড়ি থেকে হালিমকে শ^শুরবাড়ি ডেকে নিয়ে যান শ্যালক সবুজ। পরে রাতেই হালিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেন। বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে পরের দিন মঙ্গলবার সকালে হালিম খানকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এর কিছুক্ষণ পরই কৌশলে হাসপাতালে লাশ ফেলে রেখেই পালিয়ে যান দ্বিতীয় স্ত্রী রেশমাসহ শশুর বাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে দুপুরে হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

নিহতের পারিবার সূত্রে আরো জানা যায়, ২০০৬ সালের ২১ শে ফেব্রæয়ারিতে পারিবারিকভাবে মাদারীপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার আলি হায়দারের মেয়ে জবেদা সুলতানাকে বিয়ে করেন ইতালি প্রবাসী হালিম খান। পরে পারিবারিক বিরোধের জেরে ২০১৮ সালের জুনে দুজনের ডিভোর্স হয়। নিহত হালিমের প্রথম ঘরে ১৩ বছরের মেয়ে ও ৭ বছরের ছেলে আছে।

নিহত হালিম খানের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে হিমু আক্তার বলেন, আমার বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাবার মাথার পিছনে ও সারা শরীরে পিটানোর চিহ্ন আছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

নিহতের বড়ভাই মো. রাজ্জাক বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ড কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। আমার ছোটভাই হালিম ইতালি থেকে ছুটিতে এসে খুন হবে এটা কোনভাবেই বুঝতেই পারিনি। আমরা খুনিদের কঠিন বিচার চাই। আমার ভাইয়ের মাথায় ও সারা শরীরে আঘাতের দাগ আছে। এভাবে পিটিয়ে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানাই।



রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, হাসপাতাল থেকে খবর পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। জানতে পেরেছি স্ত্রী ও তার শশুর বাড়ির লোকজন হালিমকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করেন। এসময় তারা লাশ রেখেই পালিয়ে যায়। ঘটনাটি সন্দেহজনক। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাসান বলেন, ইতালি প্রবাসীর হত্যাকান্ডে নিহতের বড়ভাই মো. রাজ্জাক বাদী হয়ে ৪ জনের নামে রাজৈর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে দোষিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযুক্তরা সবাই পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

(এএসএ/এএস/জুন ২৪, ২০২৫)