দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : দীর্ঘ ১৫ বছর পর প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরেছেন কামাল হোসেন। পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলনের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তিনি। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরা হয়নি তার—কারণ বাড়িতে অপেক্ষা করছিল প্রিয় ছেলের নিথর দেহ!

হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। নিহত তরুণের নাম নুরুদ্দিন হোসেন (১৭)। তিনি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মোহনগঞ্জ আদর্শ বিদ্যালয় থেকে। পরীক্ষার পর তিনি তাবলীগ জামাতে ৪০ দিনের সফরে বের হন। সফরের শেষ পর্যায়ে তিনি ছিলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গায়।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে সফরসঙ্গীদের সঙ্গে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা গোলচত্বর এলাকায় ঘুরতে যান নুরুদ্দিন। সন্ধ্যায় মাগরিবের আজান হলে সবাই মসজিদের দিকে রওনা দেয়। এ সময় অন্ধকারে ওভারব্রিজ পার হতে গিয়ে অসাবধানতাবশত নিচে পড়ে যান তিনি।

স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয় তার।

নুরুদ্দিনের সফরসঙ্গী বন্ধু মহসিন শেখ বলেন, "ও খুবই শান্ত, মেধাবী ও ধার্মিক ছিল। ওর আগ্রহেই আমরা তাবলীগ জামাতে বের হই। আজানের পর ও আমাদের আগেই মসজিদের দিকে যাচ্ছিল। আমরা একটু পেছনে ছিলাম। হঠাৎ দেখি ও নিচে পড়ে গেছে। হাসপাতালে নেয়ার পথেই ও মারা যায়।"

তিনি আরও বলেন, "মঙ্গলবারই ওর বাবা প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন। ওর সঙ্গে ফোনেও কথা হয়েছিল। এখন আমরা ওর বাবাকে কী বলব!"

ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন জানান, ঘোরাঘুরির একপর্যায়ে ব্রিজ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন ওই তরুণ। পরবর্তীতে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

নুরুদ্দিনের এই আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবার ও এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর শেষে বাবা-ছেলের দেখা হলেও, তা হয়ে উঠল জীবনের সবচেয়ে করুণ মুহূর্ত।

(ডিসি/এএস/জুন ২৫, ২০২৫)