ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : অবসরে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক, আবার তিনিই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি। নিজের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ৩০ জুন সোবার। তাই ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ওইদিন উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চলমান ষান্মাসিক পরীক্ষার রুটিনে ৩০ তারিখ ছুটি রাখার ঘটনায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।

একজন প্রধান শিক্ষকের বিদায় সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে পরীক্ষার রুটিনে ওই দিন ছুটির ঘটনায় উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাসহ বিদ্যালয়গুলো শিক্ষক সমিতির নিকট জিম্মি বলে দাবী করছেন অভিভাবক এবং সাধারণ শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দ। এই বিদায় সংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজিৈনতক দলের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ৭’শ লোককে ভুরিভোজ করানোর আয়োজন চলছে বলে জানা গেছে। এজন্য প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে গরু ও খাসি। শনিবার (২৮ জুন) দুপুরে পাবনা ঈশ্বরদীর পাকশী নর্থবেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে ও শিক্ষক শিক্ষিকাসহ বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকশী নর্থবেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুল হক। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি। চলতি মাসের ৩০ জুন তাঁর শিক্ষকতা জীবনের শেষ কর্ম দিবস। এজন্য ওইদিনকে স্মরনীয় ও আলোচিত করতে বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষককে দিয়ে ফান্ডের টাকা খরচ করে বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করাচ্ছেন। এমনকি উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিদায় সংবর্ধনায় উপস্থিত থাকার জন্য ইতোপুর্বে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে সভাও করেছেন। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সংবর্ধনার দিন ৩০ জুন সমিতির মাধ্যমে পরিচালিত উপজেলার সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষান্মাসিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ সরকারী আদেশ রয়েছে সরকারি ছুটি ব্যতিত সকল দিনে পরীক্ষাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলবে। পরীক্ষা না থাকলে বিদ্যালয়ে পাঠদান চলবে।

পরীক্ষার রুটিন বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গত ২৪ জুন থেকে শুরু হয়ে ২৫ ও ২৬ জুন পর্যন্ত টানা পরীক্ষা, সাপ্তাহিক ছুটির দিন (শুক্রবার ও শনিবার) ২৭ এবং ২৮ তারিখে স্বাভাবিক নিয়মেই বন্ধ। যথারীতি ২৯ তারিখে পরীক্ষার পর ৩০ তারিখ সরকারি কোন কারণ ছাড়াই পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর যখানিয়মে ১ জুলাই হতে ৩ জুলাই পরীক্ষা চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির কারণে ৪ ও ৫ জুলাই এবং আশুরার জন্য ৬ জুলাই বন্ধ। এরপর ৭ জুলাই হতে ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পর পর পরীক্ষা। ১১ ও ১২ জুলাই সাপ্তাহিক বন্ধের পর ১৩ জুলাই পরীক্ষা শেষ হবে। প্রণিত রুটিনই প্রমাণ করে সমিতির সভাপতির বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য ৩০ জুন পরীক্ষা বন্ধ রাখ হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শুন্য রয়েছে। একজন একাডেমিক সুপারভাইজার দিয়ে কোন মতে চলছে শিক্ষা অফিস। ফলে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চললেও দেখার কেউ নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে জানান, পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হয়ে সমিতির ফান্ডের কয়েক লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। পরবর্তিতে সমিতির শিক্ষকদের নিকট ক্ষমা চেয়ে সমিতির ফান্ডে সাড়ে তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। এসব নিয়েও আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ভাষা শহীদ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক মো. মুক্তার হোসেন বলেন, অভিযোগগুলো সঠিক নয়। নিয়ম মেনেই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষান্মাসিক পরীক্ষার রুটিন হয়েছে। পরীক্ষাও চলছে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাস বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এব্যাপারে কেউ আমাকে জানাননি। বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেখেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সুজানগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, আমি ঈশ্বরদী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার আগেই পরীক্ষার রুটিন হয়েছে। এই বিষয়ে আমি বলতে পারবো না। তবে প্রধান শিক্ষক ফজলুল হকের বিদায় সংবর্ধনার দিনে পরীক্ষা না হলেও পেপার মিলসসহ সকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলবে। বিদায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আমারও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বিলুপ্ত পাকশী নর্থবেঙ্গল পেপার মিলের চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল খায়ের মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি গত এক বছর ধরে বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। বিদায় সংবর্ধনায় গরু খাসি কেটে ভুরিভোজের প্রস্তুতির বিষয়ে বিদ্যালয় ফান্ডের অর্থ ব্যয় হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে এমডি বলেন, ফান্ড থেকে কোন টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিকট থেকে কিছু চাঁদা নিয়ে তাদের চা-বিস্কুট খাওয়া হবে বলে শুনেছি। সেখানে আমিও অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবো। আর পরীক্ষা বন্ধ রাখার বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও নর্থবেঙ্গল পেপার মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফজলুল হক বলেন, এসব তথ্য সঠিক নয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, আয়োজনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা গরু-খাসি জবাই করে আমাকে বিদায় সংবর্ধনা দিবে না পায়ে হেঁটে বিদায় দিবে সেটা তাদের বিষয়।

(এসকেকে/এএস/জুন ২৯, ২০২৫)