লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেতে পারে, জুটে যেতে পারে নগদ টাকা, মুঠোফোন, টিভি। এই প্রলোভনে প্রতিদিনই কয়েক'শ মানুষ লটারির টিকিট কিনছেন। দিন শেষে ভাগ্যে কিছু না জুটলেও দমছেন না তাঁরা। আবার কিনছেন। এভাবে পকেট ভরছে লটারির টিকিট বিক্রির নামে জুয়ার আয়োজকদের। মেলায় লটারির সঙ্গে চলছে অশ্লীল নাচ; বসছে মাদকের আসর।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলা শহরে বিজয় মেলার নামে ১২ দিন ধরে চলছে লটারির নামে জুয়া খেলা, অশ্লীল নাচ ও মাদকের আসর। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরকে সামনে রেখে গত ২৫ নভেম্বর শহরের স্থানীয় ওয়াপদা মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টর কামান্ডার লে. ক. (অব) আবু ওসমান চৌধুরী। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা চলার কথা রয়েছে। সরেজমিনে গত বুধবার রাত আটটা থেকে ১১ পর্যন্ত দেখা যায়, মূল মঞ্চের প্রায় ১০০ গজ দূরে কিছু জায়গা ঘিরে এক পাশে পুতুলনাচ ও অন্য পাশে জাদু প্রদর্শনী চলছে। পুতুলনাচের ফাঁকে অশ্লীল নাচও প্রদর্শন করা হচ্ছে। জাদু আর পুতুলনাচ দেখতে এসে এই অশ্লীল নাচও দেখছে শিশু-কিশোরেরা। মেলার আশপাশে গাঁজার কয়েকটি আসরও চোখে পড়ে। মেলায় আসা রিকশাচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, মেলা শুরুর পর থেকে ১১ দিনে প্রতিদিন তিনি চার থেকে পাঁচটি করে টিকিট কিনছেন। কিন্তু এখনো কোনো পুরস্কার পাননি। গতকাল বৃস্পতিবার দুপুরে লটারির টিকিট বিক্রেতা সবুজ হোসেন বলেন, তিনি একাই প্রতিদিন ছয় হাজার থেকে দশ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি করেন।

আয়োজক কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বলেন, লটারির ড্র থেকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হচ্ছে। আর পুরস্কার বাবদ ব্যয় হচ্ছে এক লাখ টাকার মতো। স্থানীয় কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা বলেন, বিজয় মেলা আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়োর গৌরবগাথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক-সংগীত-চলচ্চিত্র ও মুক্তিযুদ্ধের নানা নিদর্শন প্রদর্শনের কথা। এলাকার কয়েকজন অভিযোগ করেন, মেলাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজন করে। পরে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহের হোসেন ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিয়াজী মেলার উপ-ইজারা নেন। তারপর শুরুর দিন থেকেই মেলার মূল মঞ্চে গভীর রাত পর্যন্ত লটারির নামে জুয়ার আসর বসানো হচ্ছে; সঙ্গে অশ্লীল নাচ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ রায়পুর উপজেলা কমান্ডার ও বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব সহিদ উল¬া বলেন, আমরা মেলার আয়োজন করলেও পরে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এটি চালানোর দায়িত্ব নেন। মেলার শর্ত ভঙ্গ করে এমন কিছু কাজকর্ম চলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মেলা বর্জন করেছে। উদ্বোধনের পর আমি আর সেখানে যাইনি।

অবশ্য পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহের হোসেন মুঠোফোনে বলেন, মেলায় অশ্লীল কিছু হচ্ছে না। জুয়া না, লটারি ড্র হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবদীন বলেন,লটারি ড্র বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিজয় মেলায় কোনো ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ চললে তা অবশ্যই বন্ধ করা হবে। চাঁদপুর পুলিশ সুপার আমির জাফর বলেন, ‘মেলায় অশ্লীলতা ও জুয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। এসব বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ফরিদগঞ্জ থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

(এমআরএস/পি/ডিসেম্বর ১১, ২০১৪)