সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : শুধুমাত্র সংযোগ সড়ক না থাকায় টাঙ্গাইলে লৌহজং নদীর উপর প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজেও লাঘব হয়নি ৩০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চিলাবাড়ী বাজারের পূর্ব পাশে  লাউজানা এলাকায় লৌহজং নদীর উপর সংযোগ সড়ক ছাড়া একটি ব্রিজ নির্মাণ করে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদ। ব্রিজটিতে প্রকল্প ব্যায় ধরা হয়  প্রায়  এক কোটি  টাকা। ২০২৩- ২০২৪ অর্থ বছরে প্রত্যুস বিল্ডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪০ মিটার এ ব্রিজটির নির্মাণ করে। 

এলাকাবাসী জানায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত ব্রিজটি কোন কাজেই আসছে না। অথচ এই এলাকায় একটি ব্রিজের প্রয়োজন ছিল অনেক । সেই কাঙ্খিত ব্রিজটি নির্মিত হয়েছে কিন্তু ভোগান্তি শেষ হলো না। সরকার এত টাকা ব্যয় আমাদের পারাপারের সুযোগ করে দিয়েছে। অথচ ঠিকাদার আর স্থানীয় এলজিইডি'র গাফলতির কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। ব্রিজের উপর দিয়ে বাইমাইল, কাগমারা, চর কাগমারা, বাসাখানপুর, চিলাবাড়ী, লাউজানা, ধরেবাড়ি, যুগনিসহ প্রায় ৩০ টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। বর্ষা আসার আগেই এই ব্রিজের সংযোগ ঠিক না হলে ভোগান্তি আরো কয়েকগুন বেড়ে যাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ব্রিজ নির্মাণের কাজ অনেক আগে শেষ হয়েছে। ব্রিজের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক তৈরি না করেই ঠিকাদার লাপাত্তা। সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজ দিয়ে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারে না। আসছে বর্ষায় ভোগান্তি বাড়বে। কোটি টাকার ব্রিজ জনগণের কোন উপকারে আসবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, নদীর ওপারে মসজিদ।সংযোগ সড়ক না থাকায় দশ বারটা মাটির বস্তা ফেলেছি ব্রিজের ঢালে। যাতে করে সহজেই ব্রিজে উঠে মসজিদে যেতে পারে। তিনি আরো বলেন নদীর দুই প্রান্তে বড় বড় দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দুটি বাজার রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজে সংযোগ সড়ক হলে খুব সহজেই যাতায়াত করা যাবে। দূর্ভোগ কমবে চলাচলকারীদের। সরকারের কাছে দাবি দ্রুত সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হোক।

স্থানীয় শিক্ষার্থী লিমা আকতার বলেন, এই ব্রিজটি নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। অন্যথায় প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে বাড়িতে আসতে হয়। সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রতিদিন প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। অথচ ব্রিজ পার হলেই আমাদের স্কুলে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, সংযোগ সড়ক ছাড়াই ব্রিজের নকশা ও প্রকল্প ব্যায় নির্ধারণ করে স্থানীয় এলজিইডি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। আর ঠিকাদার প্রকল্প ব্যায় পুরোটা উঠিয়ে নিয়ে সটকে পড়েছে। বিপদে আছি আমরা এলাকাবাসী। এলজিইডি ইচ্ছে করলে ঠিকাদার কে চাপ দিয়ে এই সংযোগ সড়ক তৈরি করে দিতে পারে। সংশ্লিষ্টদের প্রতি আবেদন, দ্রুত ব্রিজের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক তৈরি করে বর্ষার আগেই চলাচল উপযোগী দিন।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রত্যুষ বিল্ডার্সের পক্ষে প্রসেনজিৎ ধর বলেন, ব্রিজের ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী আমরা কাজটি সম্পূর্ণ করেছি। আর সে হিসেবেই বিল তুলেছি ।ওয়ার্ক অর্ডারে ব্রিজের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক উল্লেখ না থাকায় সংযোগ সড়ক স্থাপিত হয়নি ।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার এলজিইডি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় ব্রিজে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। তবে অতিরিক্ত বরাদ্দের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে শুরুতে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার বলেন, ব্রিজটি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরই উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে একটা প্রতিবেদন করতে বলেছি। এলাকাবাসীর ভোগান্তি লাগবের জন্য খুব দ্রুতই সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।

(এসএএম/এএস/জুলাই ০৬, ২০২৫)