সাতক্ষীরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নিলেন ৩২ সাংবাদিক

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সাংবাদিকদেরই বিরুদ্ধে দায়ের করা পাল্টা মামলার আসামী ৩২ জন সাংবাদিক আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন।
সোমবার (৭ জুলাই) সাতক্ষীরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক রাফিয়া সুলতানা তাদের প্রত্যেককে এক হাজার টাকার বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি, চ্যানেল আই এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের বারবার নির্বাচিত সাবেক সভাপতি এড. আবুল কালাম আজাদ, সময় টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মমতাজ আহমেদ বাপি, একাত্তর টিভির বরুণ ব্যানার্জি, মাই টিভির ফয়জুল হক বাবু, সাপ্তাহিক মুক্ত স্বাধীন সম্পাদক আবুল কালাম, ডিবিসি এর এম বেলাল হোসাইন, দৈনিক ভোরের আকাশ এর আমিনুর রহমান, এনটিভির এসএম জুলফিকার আলী জিন্নাহ, দৈনিক কালবেলা এর হাবিবুল বাসার ফরহাদ, ঢাকার ডাক এর তৌফিকুর রহমান লিটু, প্রতিদিনের কাগজ এর ইদ্রিশ আলী, দৈনিক খবর বাংলাদেশ এর রেজাউল ইসলাম বাবলু, প্রজন্ম একাত্তর এর সাইফুল আযম মামুন, দৈনিক ভোরের পাতা এর মহিদার রহমান, দৈনিক পত্রদূত এর হাবিবুল হাসান, যমুনা টিভির আকরামুল ইসলাম, রাজা দত্ত, ভয়েজ অব টাইগার এর মিলন কুমার রুদ্র, দৈনিক খুলনা টাইমস এর মেহেদী আলী সুজয়, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির শেখ ফরিদ আহমেদ ময়না, দৈনিক যায় যায় কাল এর আব্দুর রহমান, দৈনিত তথ্য এর কাজী জামাল উদ্দীন মামুন, দৈনিক নব চেতনা এর হাসান গফুর, দৈনিক কালান্তর এর বোরহান উদ্দীন বুলু, দৈনিক অনির্বান এর জিএম সোহরাব হোসেন, ঢাকা পোস্ট এর ইব্রাহিম খলিল, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন এর হাবিবুর রহমান সোহাগ, দৈনিক রূপান্তর প্রতিদিন এর আব্দুস সালাম, দৈনিক বাংলার আবু সাঈদ, আজকের বিজনেস বাংলাদেশ এর জামাল উদ্দীন ও ঢাকা টাইমস এর হোসেন আলী।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপি জানান, গত বছর ২৪ আগষ্ট সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি সদস্যকে বাইরে রেখে সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিকভাবে আবু নাসের মো. আবু সাঈদকে সভাপতি ও আব্দুল বারীকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি মনগড়া কমিটি ঘোষণা করা হয়।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যরা এর প্রতিবাদ জানান এবং প্রেসক্লাবকে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উভয়পক্ষকে তাদের সদস্যদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক আহবান করেন।
কিন্তু ঐ বৈঠকে প্রেসক্লাবের সর্বশেষ ভোটার তালিকার ৯৬ জন সদস্যের মধ্যে একপক্ষে অর্ধশতাধিক সদস্য উপস্থিত থাকলেও অপরপক্ষে আব্দুল বারীর নেতৃত্বে ৫জন উপস্থিত হন। সে সভায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং দুটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোন সমঝোতা ছাড়াই সে সভা শেষ হয়।মমতাজ আহমেদ বাপি আরো জানান, সম্প্রতি আবু নাসের মো. আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নেতৃত্বাধীন অবৈধ কমিটি তাদের ইচ্ছামত পুরাতন সদস্যদের বাদ দিয়ে নতুন সদস্য অর্ন্তভুক্ত করে একটি সাধারণ সভা আহবান করেন। সে সভায় তাদের বিরোধী পক্ষের অন্তত ২০ জন সদস্যকে চিঠিই দেওয়া হয়নি।
যাদের অনেককে মৌখিকভাবে প্রেসক্লাবে ঢুকতে নিষেধ করে দেওয়া হয়। এমতাবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যরা আবুল কাশেমকে সভাপতি এবং আসাদুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি ঘোষণা করেন এবং জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে অবহিত করে গত ৩০ জুন তারা প্রেসক্লাবে যাওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে পূর্ব থেকে জড়ো করা বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়। যে হামলায় ৩০জন সাংবাদিক আহত হন।
এব্যাপারে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে গত পহেলা জুলাই আবু নাসের মো. আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরদিন আবু নাসের মো. আবু সাঈদ বাদী হয়ে ৩৭জনকে আসামী করে একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
এদিকে আবু নাসের মো. আবু সাঈদ এর দায়ের করা মামলার ৩২ জন আসামীর পক্ষে জামিন শুনানীতে অংশ নেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. এম শাহ আলম, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এড. খায়রুল বদিউজ্জামানসহ অর্ধ শতাধিক আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন সিএসআই বিশ্বজিৎ রায়।
(আরকে/এসপি/জুলাই ০৭, ২০২৫)