আল-আমিন মিয়া, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার খাইছড়া চা বাগানে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য দয়াল বোনার্জী ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগে চা শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাগানের শত শত শ্রমিক সোমবার (৭ জুলাই) কর্মবিরতি ঘোষণা করে বিক্ষোভে অংশ নেন।

খোদ বাগান পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকেই দয়াল বোনার্জী এবং তার ছেলে মনিশংকর বোনার্জীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে বাগানের মহাব্যবস্থাপক বরাবর। অভিযোগে বলা হয়, ইউপি সদস্য দয়াল বোনার্জী আওয়ামিলীগ সমর্থক, তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ শ্রমিকদের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ সেই চাকরি পাননি। আবার তরুণদের মাঠ তৈরি ও খেলাধুলার জন্য সরকারি বরাদ্দের ১ লক্ষ পাঁচশত টাকা সঠিকভাবে ব্যয় না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, সরকার প্রদত্ত নগদ সহায়তা থেকে মাথাপিছু ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা করে শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে। পঞ্চায়েতর দাবি করেছে, করোনা মহামারির সময় বাংলার চৌকিদার ও বাবুর্চীর উপর শারীরিকভাবে হামলা করেন দয়াল বোনার্জির পরিবার। ২০২২ সালে মজুরি আন্দোলনের সময় বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. কিবরিয়ার ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে।

আরও অভিযোগ উঠেছে, দয়াল বোনার্জী দুই পক্ষের বিবাদে নিরপেক্ষ অবস্থান না নিয়ে একপক্ষের পক্ষে থানায় মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপরপক্ষকে হয়রানি করেন। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণের ভাতা আত্মসাৎ এবং নলকূপ স্থাপনের নামেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চা শ্রমিকরা দয়াল বোনার্জীর অপসারণের দাবিতে বাগানের ভেতর ও বাইরের সড়কে বিক্ষোভ করেন। পরে ভাড়াউড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক শিবলী আহমেদ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাজে ফিরতে বলেন। তবে শ্রমিকরা তাকে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। তারা জানান, এই সময়ের মধ্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তারা আবারো বিক্ষোভে নামবেন।

বাগান পঞ্চায়েতের নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, দয়াল বোনার্জি ও তার পরিবারের অপকর্মের কারণে বাগানে অস্থিরতা ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা যেকোনো সময় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলায় রূপ নিতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পঞ্চায়েত সদস্যরা অভিযুক্তদের অন্যত্র চা বাগানে স্থানান্তরের জন্য বাগান কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

উল্লেখ্য, এই বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো অর্থ ফেরত দেওয়া হয়নি বা কার্যকর কোনো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন পঞ্চায়েত কমিটি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য দয়াল বোনার্জী বলেন, আমার উপরে যে অভিযোগগুলো তুলা হয়েছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়।

(এএ/এসপি/জুলাই ০৮, ২০২৫)