# নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

# ধ্বসে পড়া গার্ডার সংস্কার করে ব্রিজ নির্মাণ

# ফাইল বন্দি বুয়েটের তদন্ত রিপোর্ট

# মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ বছর পার হলেও অসমাপ্ত ব্রিজের কাজ

# ৫ বছরে ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে দাবি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের

সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : জনদূর্ভোগ লাঘবে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার সল্লায় লৌহজং নদীর উপর ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০ মিটার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ৪ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প টি ২০২১ সালের মে মাসে শুরু হলেও রহস্য জনক কারনে ২০২৫ সালের জুন মাসেও শেষ হয়নি সেতুর কাজ। গত ৫ বছরে মাত্র ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২ বছর আগে কাজের শুরুতেই ব্রীজের গার্ডার ধ্বসে পড়ে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়নি। কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে কৌশলে তদন্ত রিপোর্ট ফাইল বন্দি করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিরাপদ রাখে এলজিইডি। ফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গতি কমে যায় আর ধ্বসে পড়া গার্ডার সংস্কার করেই চলে নির্মাণ যজ্ঞ।

জানা যায়, যমুনা সেতু মহাসড়কে চাপ ও ঝুঁকি কমানো, কালিহাতীর সাথে টাঙ্গাইল সদর ও ভূঞাপুর উপজেলার মানুষের যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে সল্লায় লৌহজং নদীর উপর ২৫০ মিটার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ২০২১ সালের মে মাসে কাজ শুরু হয়। কাজটি ২০২৪ সালের মে মাসে শেষ হওয়া কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।

এদিকে ব্রিজ সংশ্লিষ্ট সড়ক ব্যবহারকারীরা জানান, ব্রীজটির কাজ শেষ না হওয়ায় খেয়া নৌকার জন্য ১০ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সময় মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেন না। এতে প্রতিনিয়ত গুনতে হচ্ছে নৌকা ভাড়া, অপচয় হচ্ছে সময়।

স্থানীয়রা বলছেন, শুরুতেই সল্লা ব্রীজে নিম্নমানের কাজের কারনে ব্রীজের গার্ডার ধ্বসে পড়েছিলো। এটা নিয়ে বুয়েটসহ সংশ্লিষ্টরা তদন্ত করলেও রহস্যজনক কারনে তা প্রকাশ করা হয়নি। দীর্ঘ সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় রোগি, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দু বছর আগে
ভ্যান চালক দবির উদ্দিন খেয়া নৌকায় পার হতে গিয়ে ধান বোঝাই ভ্যানগাড়ি ধানসহ নদীতে পরে যায়। এতে পাঁচ মণ ধান ভেসে যায় । এরকম দূর্ঘটনা অহরহই ঘটে।

দবির আক্ষেপ করে বলেন, যারা ব্রিজের কাজ করে হেগো দেহার কেউ নাই । এরাতো দুধ দিয়ে কালসাপ পালতাছে।একটা ব্রিজ করতে এতো সময় লাগে । দেশের ট্যাকা গেলো অথচ আমরা উপকার পাইলাম না । আমাগো ভোগান্তি কবে শেষ অইবো?

কালিহাতী উপজেলার সল্লা সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেক আলী মোল্লা বলেন, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। তদারকির অভাবে কচ্ছপ গতিতে ব্রিজের কাজ এগোচ্ছে। ব্রীজের উভয় পাশে অন্তত চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ ও একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি এই শিক্ষকের।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স চৌধুরী এন্টার প্রাইজের প্রজেক্ট ম্যানেজার নাহিদুল ইসলাম লিটন বলেন, ইতিমধ্যে সল্লা ব্রীজের ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

নিম্নমানের কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক উপয়ান্তর ঠিকারদারের পক্ষে সাফাই গেয়ে কালিহাতী উপজেলা প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের যে সল্লা ব্রিজটি রয়েছে, ৭০ শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি কাজগুলোর নির্ধারিত সময় রয়েছে, আশা করছি এর মধ্যে শেষ হবে।

(এসএম/এসপি/জুলাই ০৯, ২০২৫)