দিলীপ চন্দ, ফরিদপুর : ফরিদপুরে ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে নির্মাণ করা হচ্ছে “জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ”। শহরের হাসিবুল হাসান লাবলু সড়কে অবস্থিত সাবেক আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ধ্বংসস্তূপেই গড়ে উঠছে এই স্মৃতিস্তম্ভ। ইতোমধ্যে বুধবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে গণপূর্ত বিভাগ।

ফরিদপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান জানান, সারা দেশের ন্যায় অভিন্ন পরিকল্পনায় এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

যেখানে আগুন, ভাঙচুর আর কান্না ছিল, সেখানেই গড়ে উঠছে স্মরণচিহ্ন

২০২৪ সালের ৪ ও ৫ আগস্ট জেলার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গণঅসন্তোষের জেরে দুই দফা হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর ও আগুনে কার্যালয়টি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। সেই স্থানটিই আজ ইতিহাস ও স্মৃতির সাক্ষ্য বহনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যে কাঠামোটি অবশিষ্ট ছিল তা ভাঙা হচ্ছে বৃহৎ হাতুড়ি দিয়ে। নির্মাণ কাজে নিযুক্ত রয়েছেন সাত জন শ্রমিক এবং কাজের তত্ত্বাবধানে আছেন ঠিকাদার সোহান আল মামুন। তিনি বলেন, “গণপূর্ত বিভাগের বরাদ্দে সরাসরি পদ্ধতিতে আমরা কাজটি পেয়েছি এবং আজ থেকেই কাজ শুরু করেছি।”

কার্যালয় থেকে স্মৃতি স্তম্ভ—পটভূমিতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংযোগ

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের নামে ২৬ শতাংশ জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে বন্দোবস্তে নেওয়া হয় শামীম হকের মাধ্যমে। পরে সেখানে গড়ে ওঠে শেখ রাসেল স্কয়ার, এবং একই জায়গায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই কার্যালয়টি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কাজী জাফরউল্লাহ ও আব্দুর রহমান।

ধ্বংসের পরও এই স্থান জীবন্ত থাকে—ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় এখানে দুঃস্থদের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কেন এই স্থানই বেছে নেওয়া হলো?

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন বলেন, "জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ কোথায় স্থাপন করা হবে তা নির্ধারণে আমরা শহরের একাধিক স্থান পরিদর্শন করি—পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, একাত্তরের শহীদ বেদীর আশপাশ এবং রাজবাড়ি মোড়। তবে নিরাপত্তা, নাগরিক প্রবেশাধিকার ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ধ্বংসপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের স্থানকেই সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়েছে।”

সমাপ্তি এবং শ্রদ্ধাঞ্জলির প্রস্তুতি

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করে ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’-এ এই নতুন স্মৃতিস্তম্ভে আনুষ্ঠানিকভাবে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সরকারি উদ্যোগে দেশব্যাপী ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ’ নির্মাণ হচ্ছে। ফরিদপুরেআ.লীগ কার্যালয়ের ধ্বংসস্তূপের উপর এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।এর আগে ৪–৫ আগস্ট ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে এই স্থানেই হয়েছিল ভাঙচুর ও আগুন।

(ডিসি/এসপি/জুলাই ১০, ২০২৫)