ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাম্য চিকিৎসক সংকটের কারণে স্বাস্থ্য সেবায় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। 

সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জানা যায়, উপজেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের একমাত্র ভরসাস্থল ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কোন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। সর্দি কাশি জ্বর মাথাব্যাথা ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসা ছাড়া জটিল কোন রোগী আসা মাত্রই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রীভূক্ত করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করায় চরম বিপাকে পড়তে হয় দুস্থ্য অসহায় রোগীদের।

উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স সুত্রে জানা যায়, এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ৬ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট ১০ জনের স্থলে আছেন ৫ জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থোপেডিক্স ডা. আক্তার হোসেন তাঁর স্ত্রীর গাইনী সমস্যা জনিত কারণে স্ত্রীকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ৬ মাসের ছুটিতে ভারতে অবস্থান করছেন। একই সমস্যায় অ্যানেসথেসিয়া কনসালটেন্ট ডা. আফরোজা শাহীনও ৬ মাসের ছুটিতে ভারতে রয়েছেন। প্রসূতি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সালমা তিনিও ৬ মাসের মাতৃত্ব ছুটিতে আছেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান কার্যক্রমে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। তবে মাঝে মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় প্রতি মঙ্গলবার সিজার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে বলে দাবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। বাকীসব প্রসূতি নারীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করতে হচ্ছে।

উপজেলার সোহাগী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামের নুরজাহান বেগম জানান, তার মেয়েকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন বাচ্চা প্রসব করানোর জন্য। নরমাল প্রসব হবে না বলে জরুরি বিভাগ থেকে কর্তব্যরত ডাক্তার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ডের কাগজ ধরিয়ে দেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা গরীব মানুষ সকল প্রসূতি পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য সমান নয়। এমনও গরীব পরিবার আছে যারা এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ময়মনসিংহ গিয়ে সিজার করানো তাদের পক্ষে চরম কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায়। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই প্রায় ৫ বছর এবং চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই প্রায় ২ বছর ধরে। দীর্ঘদিন ধরে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় বর্হিবিভাগে সব ধরণের রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে ৬ জন মেডিকেল অফিসার কর্মরত আছেন তাদের পালাক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ২ থেকে ৩ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কর্মরত স্বল্প সংখ্যক মেডিকেল অফিসারদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। কনসালটেন্ট মেডিকেল অফিসার ছাড়াও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ১৫ জনের স্থলে রয়েছেন ৮ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ৮ জনের স্থলে রয়েছেন ৬ জন। স্বাস্থ্য সহকারী ১২০ জনের স্থলে আছেন ৮৩ জন। নাইটগার্ড ৪ জনের স্থলে আছেন ২ জন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী ৫ জনের স্থলে ২জন। ওয়ার্ডবয়ের ৩টি পদই খালি। দীর্ঘদিন ধরে হিসারক্ষক, ক্যাশিয়ার, পরিসংখ্যানবিদের পদগুলো শুন্য রয়েছে। অফিস সহকারী ৪ জনের স্থলে রয়েছে ২ জন। এমএলএসএস ৪ জনের মাঝে আছে ২জন। স্টোরকিপার পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শুন্য।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে রাজীবপুর ইউনিয়নের যাদুয়ারচর গ্রামের সফিকুল ইসলাম (৪০) জানান, ডাক্তার ব্যবস্থাপত্রে যে ৫ প্রকার ওষুধ লিখেছেন তার মধ্যে মাত্র ২টি হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকী ওষুধ বাহির থেকে কেনার পরামর্শ দিয়েছেন ফার্ম্মাস্টি। পৌরসদর টিএন্ডটি রোডের বাসিন্দা আব্দুল কাদির (৫০) জানান, তিন একজন ডায়বেটিসের রোগী। তিনি হাসপাতালে দুদিন ঘুরেও কোন ওষুধ পাননি।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া তাসনিম মুনমুন বলেন, ইদানিং ওষুধ সরবরাহ একটু কম থাকায় সবধরণের ওষুধ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও হাসপাতালে যে পরিমাণ ওষুধ রয়েছে তা দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি। অচিরেই এ ওষুধ সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি।

এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম খান জানান, ডাক্তার সংকট নিসরণ করতে ২ থেকে ৩ মাস সময় লাগবে। ওষুধ সংকট সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। খুব দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।

(এন/এসপি/জুলাই ১১, ২০২৫)